পাতা:গল্প-দশক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২১৩

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
অতিথি।
২০৫

লইল। কোথাও তাহার প্রকৃত কোন বন্ধন ছিল না বলিয়াই এই বালক আশ্চর্য্য সত্বর ও সহজে সকলেরই সহিত পরিচয় করিয়া লইতে পারিত। তারাপদ দেখিতে দেখিতে অল্প দিনের মধ্যেই গ্রামের সমস্ত হৃদয় অধিকার করিয়া লইল।

 এত সহজে হৃদয়হরণ করিবার কারণ এই, তারাপদ সকলেই সঙ্গে তাহাদের নিজের মত হইয়া স্বভাবতই যোগ দিতে পারিত। সে কোন প্রকার বিশেষ সংস্কারের দ্বারা বন্ধ ছিল, অথচ সকল অবস্থা সকল কাজের প্রতিই তাহার এক প্রকার সহজ প্রবণতা ছিল। বালকের কাছে সে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক বালক, অথচ তাহাদের হইতে শ্রেষ্ঠ ও স্বতন্ত্র, বৃদ্ধের কাছে সে বালক নহে অথচ জ্যাঠাও নহে, রাখালের সঙ্গে সে রাখাল অথচ ব্রাহ্মণ। সকলের সকল কাজেই সে চিরকালের সহযোগীর ন্যায় অভ্যস্তভারে হস্তক্ষেপ করে;—ময়রার দোকানে গল্প করিতে করিতে ময়রা বলে দাদাঠাকুর একটু বস ত ভাই আমি আস্‌চি-তারাপদ অম্লানবদনে দোকানে বসিয়া একখানা শালপাতা লইয়া সন্দেশের মাছি তাড়াইতে প্রবৃত্ত হয়। ভিয়ান্‌ করিতেও সে মজবুৎ, তাঁতের রহস্যও তাহার কিছু কিছু জানা আছে, কুমারের চক্রচালনাও তাহার সম্পূর্ণ অজ্ঞাত নহে।

 তারাপদ সমস্ত গ্রামটি আয়ত্ত করিয়া লইল, কেবল গ্রামবাসিনী একটি বালিকার ঈর্ষ্যা সে এখনো জয় করিতে পারিল। এই বালিকাটি তারাপদের সুদূরে নির্ব্বাসন তীব্রভাবে

১৮