পাতা:গল্প-দশক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২১৬

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
২০৮
গল্প-দশক।

কণ্ঠে কাঁদিয়া ঘর হইতে বাহির হইয়া গেল। তারাপদ বাঁশিটি তুলিয়া উল্টিয়া পাল্টিয়া দেখিল তাহাতে আর পদার্থ নাই। অকারণে, তাহার পুরাতন নিরপরাধ বাঁশিটার এই আকস্মিক দুর্গতি দেখিয়া সে আর হাস্য সম্বরণ করিতে পারিল না। চারুশশি প্রতিদিনই তাহার পক্ষে পরম কৌতূহলের বিষয় হইয়া উঠিল।

 তাহার আর একটি কৌতূহলের ক্ষেত্র ছিল, মতিলাল বাবুর লাইব্রেরিতে ইংরাজি ছবির বইগুলি। বাহিরের সংসারের সহিত তাহার যথেষ্ট পরিচয় হইয়াছে, কিন্তু এই ছবির জগতে সে কিছুতেই ভাল করিয়া প্রবেশ করিতে পারে না। কল্পনার দ্বারা আপনার মনে অনেকটা পূরণ করিয়া লইত কিন্তু তাহাতে মন কিছুতেই তৃপ্তি মানিত না।

 ছবির বহির প্রতি তারাপদের এই আগ্রহ দেখিয়া এক দিন মতিলাল বাবু বলিলেন, “ইংরিজি শিখ্‌বে? তা হলে এ সমস্ত ছবির মানে বুঝ্‌তে পারবে।” তারাপদ তৎক্ষণাৎ বলিল “শিখ্‌বে।”

 মতিবাবু খুব খুসি হইয়া গ্রামের এণ্ট্রেন্স্‌ স্কুলের হেড্‌মাষ্টার রামরতন বাবুকে প্রতিদিন সন্ধ্যাবেলায় এই বালকের ইংরাজি অধ্যাপনকার্য্যে নিযুক্ত করিয়া দিলেন।