পাতা:গল্প-দশক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২২০

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
২১২
গল্প-দশক।

জগৎ হইতে সম্পূর্ণ লোপ করিতে পারিলে তবে তাহার হৃদযের নিদারুণ ক্ষোভ মিটিতে পারিত।

 এদিকে সঙ্কুচিতচিত্ত সোনামণি দুই একদিন অধ্যয়নশালার বাহিরে উঁকি ঝুঁকি মারিয়া ফিরিয়া চলিয়া গিয়াছে। সখী চারুশশির সহিত তাহার সকল বিষয়েই বিশেষ হৃদ্যতা ছিল, কিন্তু তারাপদর সম্বন্ধে চারুকে সে অত্যন্ত ভয় এবং সন্দেহের সহিত দেখিত। চারু যে সময়ে অন্তঃপুরে থাকিত, সেই সময়টি বাছিয়া সোনামণি সসঙ্কোচে তারাপদর দ্বারের কাছে আসিয়া দাঁড়াইত। তারাপদ বই হইতে মুখ তুলিয়া সস্নেহে বলিত, কি সোনা! খবর কি? মাসী কেমন আছে?

 সোনামণি কহিত, অনেকদিন যাওনি, মা তোমাকে একবার যেতে বলেছে। মা’র কোমরে ব্যথা বলে দেখ্‌তে আস্‌তে পারে না।

 এমন সময় হয়ত হঠাৎ চারু আসিয়া উপস্থিত। সোনামণি শশব্যস্ত। সে যেন গোপনে তাহার সখীর সম্পত্তি চুরি করিতে আসিয়াছিল। চারু কণ্ঠস্বর সপ্তমে চড়াইয়া চোখ মুখ ঘুরাইয়া বলিত, “অ্যাঁ সোনা! তুই পড়ার সময় গোল করতে এসেছিস্‌, আমি এখনি বাবাকে গিয়ে বলে দেব!”—যেন তিনি নিজে তারাপদর একটি প্রবীণা অভিভাবিকা; তাহার পড়াশুনায় লেশমাত্র ব্যাঘাত না ঘটে রাত্রিদিন ইহার প্রতিই তাহার একমাত্র দৃষ্টি। কিন্তু সে নিজে কি অভিপ্রায়ে এই অসময়ে তারাপদর পাঠগৃহে আসিয়া উপস্থিত হইয়াছিল,