পাতা:গল্প-দশক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৩

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
প্রায়শ্চিত্ত।
১৫

মৃত্যুরজনীর ঝিল্পিধ্বনির মত একটা শব্দ হইতে লাগিল। তাহারই উপরে, প্রাঙ্গণ হইতে, প্রতিবেশীদের বাড়ী হইতে এবং দূর অট্টালিকা হইতে বহুতর শানাই বহুতর সুরে তান ধরিল। সমস্ত বঙ্গদেশ তখন আনন্দে উন্মত্ত হইয়া উঠিয়াছে।

 শরতের উৎসব-হাস্য-রঞ্জিত রৌদ্র সকৌতুকে শয়নগৃহের মধ্যে প্রবেশ করিল। এত বেলা হইল তথাপি উৎসবের দিনে দ্বার রুদ্ধ দেখিয়া ভুবন ও কমল উচ্চহাস্যে উপহাস করিতে করিতে গুন্ গুন্ শব্দে দ্বারে কিল্‌ মারিতে লাগিল। তাহাতেও কোন সাড়া না পাইয়া কিঞ্চিৎ ভীত হইয়া উর্দ্ধকঠে “বিন্দী” “বিন্দী” করিয়া ডাকিতে লাগিল।

 বিন্ধ্যবাসিনী ভগ্নরুদ্ধ কণ্ঠে কহিল, “যাচ্চি; তোরা এখন যা!”

 তাহারা সখীর পীড়া আশঙ্কা করিয়া মাকে ডাকিয়া আনিল। মা আসিয়া কহিলেন,—“বিন্দু, কি হয়েছে মা- এখনো দ্বার বন্ধ কেন!”

 বিন্ধ্য উচ্ছ্বসিত অশ্রু সম্বরণ করিয়া কহিল, “একবার বাবাকে সঙ্গে করে নিয়ে এস!”

 মা অত্যন্ত ভীত হইয়া তৎক্ষণাৎ রাজকুমার বাবুকে সঙ্গে করিয়া দ্বারে আসিলেন। বিন্ধ্য দ্বার খুলিয়া তাঁহাদিগকে ঘরে আনিয়া তাড়াতাড়ি বন্ধ করিয়া দিল।

 তখন বিন্ধ্য ভূমিতে পড়িয়া তাহার বাপের পা ধরিয়া বক্ষ শতধা বিদীর্ণ করিয়া কঁদিয়া উঠিয়া কহিল, “বাবা!