পাতা:গল্প-দশক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৬

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১৮
গল্প-দশক।

পিতামাতা ঐশ্বর্য্যশালী, তাঁহারা আমাদের অবস্থা হইতে অনেক দূরে। একে দরিদ্র বলিয়া বিন্ধ্য তাঁহাদের অপেক্ষা অনেক দূরবর্তী, তাহাতে আবার চুরি স্বীকার করিয়া সে আরও অনেক নীচে পড়িয়া গিয়াছে। স্নেহসম্পর্কের বন্ধন এত অধিক পার্থক্যভার বহন করিতে পারে কি না কে জানে!

 অনাথবন্ধু বিলাত গিয়া প্রথম প্রথম স্ত্রীকে রীতিমত চিঠি পত্র লিখিতেন। কিন্তু ক্রমেই চিঠি বিরল হইয়া আসিল, এবং পত্রের মধ্যে একটা অবহেলার ভাব অলক্ষিতভাবে প্রকাশ হইতে লাগিল। তাঁহার অশিক্ষিত গৃহকার্য্যরত স্ত্রীর অপেক্ষা বিদ্যাবুদ্ধিরূপগুণ সর্ব্ব বিষয়েই শ্রেষ্ঠতর অনেক ইংরাজকন্যা অনাথবন্ধুকে সুযোগ্য, সুবুদ্ধি এবং স্বরূপ বলিয়া সমাদর করিত; এমত অবস্থায় অনাথবন্ধু আপনার একবস্ত্রপরিহিতা অবগুণ্ঠনবতী অগৌরবর্ণা স্ত্রীকে কোন অংশেই আপনার সমযোগ্য জ্ঞান করিবেন না ইহাতে বিচিত্র নাই।

 কিন্তু, তথাপি যখন অর্থের অনটন হইল, তখন এই নিরুপায় বাঙ্গালীর মেয়েকেই টেলিগ্রাফ করিতে তাঁহার সঙ্কোচ বোধ হইল না। এবং এই বাঙ্গালীর মেয়েই দুই হাতে কেবল দুই গাছি কাঁচের চুড়ী রাখিয়া গায়ের সমস্ত গহনা বেচিয়া টাকা পাঠাইতে লাগিল। পাড়াগাঁয়ে নিরাপদে রক্ষা করিবার উপযুক্ত স্থান নাই বলিয়া তাহার সমস্ত বহুমূল্য গহনাগুলি পিতৃগৃহে ছিল। স্বামীর কুটুম্বভবনে নিমন্ত্রণে যাইবার ছল করিয়া নানা উপলক্ষে বিন্ধ্যবাদিনী একে একে সকল গহ