পাতা:গল্প-দশক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩০

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
২২
গল্প-দশক।

হইল। ইতিমধ্যে অনাথবন্ধু কেবল যে ধুতি চাদর পরিলেন তাহা নহে, তর্ক এবং উপদেশের দ্বারা বিলাতী সমাজের গালে কালি এবং হিন্দু সমাজের গালে চূণ লেপন করিতে লাগিলেন। যে শুনিল সকলেই খুসী হইয়া উঠিল।

 আনন্দে, গর্ব্বে বিন্ধ্যবাসিনীর প্রতিসুধাসিক্ত কোমল হৃদয়টি সর্ব্বত্র উচ্ছ্বসিত হইতে লাগিল। সে মনে মনে কহিল, বিলাত হইতে যিনিই আসেন, একেবারে আস্ত বিলাতী সাহেব হইয়া আসেন, দেখিয়া বাঙ্গালী বলিয়া চিনিবার যে থাকে না, কিন্তু আমার স্বামী একেবারে অবিকৃত ভাবে ফিরিয়াছেন বরঞ্চ তাহার হিন্দুধর্ম্মে ভক্তি পূর্ব্বাপেক্ষা আরও অনেক বাড়িয়া উঠিয়াছে।

 যথানির্দিষ্ট দিনে ব্রাহ্মণ পণ্ডিতে রাজকুমার বাবুর ঘর ভরিয়া গেল। অর্থব্যয়ের কিছুমাত্র ক্রটি হয় নাই। আহার এবং বিদায়ের আয়োজন যথোচিত হইয়াছিল।

 অন্তঃপুরেও সমারোহের সীমা ছিল না। নিমন্ত্রিত পরিজনবর্গের পরিবেশন ও পরিচর্য্যায় সমস্ত প্রকোষ্ঠ ও প্রাঙ্গণ সংক্ষুব্ধ হইয়া উঠিয়াছিল। সেই ঘোরতর কোলাহল এবং কর্ম্মরাশির মধ্যে বিন্ধ্যবাসিনী প্রফুল্ল মুখে শারদরৌদ্ররঞ্জিত প্রভাতবায়ু বাহিত লঘু মেঘখণ্ডের মত আনন্দে ভাসিয়া বেড়াইতেছিল। আজিকার দিনের সমস্ত বিশ্বব্যাপারের প্রধান নায়ক তাহার স্বামী। আজ যেন সমস্ত বঙ্গভূমি একটি মাত্র রঙ্গভূমি হইয়াছে এবং যবনিকা উদঘাটন পূর্ব্বক একমাত্র অনাথবন্ধুকে