পাতা:গল্প-দশক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৮

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৩০
গল্প-দশক।

সেই দূরত্বের বিচ্ছেদবশতঃ সংসারটা তাহার কাছে পরপারবর্ত্তী পরমরহস্যময় প্রমোদবনের মত ঠেকিত। সে জানিত না এই জগৎযন্ত্রটার কলকারখানা অত্যন্ত জটিল এবং লৌহকঠিন,— সুখে দুঃখে সম্পদে বিপদে, সংশয়ে সঙ্কটে ও নৈরাশ্যে পরিতাপে বিমিশ্রিত। তাহার মনে হইত সংসারযাত্রা কলনাদিনী নির্ঝরিণীর স্বচ্ছ জলপ্রবাহের মত সহজ, সম্মুখবর্ত্তী সুন্দর পৃথিবীর সকল পথগুলিই প্রশস্ত ও সরল, সুখ কেবল তাহার বাতায়নের বাহিরে এবং তৃপ্তিহীন আকাঙ্ক্ষা কেবল তাহার বক্ষঃপঞ্জরবর্ত্তী স্পন্দিত পরিতপ্ত কোমল হৃদয়টুকুর অভ্যন্তরে। বিশেষতঃ তখন তাহার অন্তরাকাশের দূর দিগন্ত হইতে একটা যৌবন-সমীরণ উচ্ছ্বসিত হইয়া বিশ্বসংসারকে বিচিত্র বাসন্তী শ্রীতে বিভূষিত করিয়া দিয়াছিল; সমস্ত নীলাম্বর তাহারই হৃদয়হিল্লোলে পূর্ণ হইয়া গিয়াছিল এবং পৃথিবী যেন তাহারই সুগন্ধ মর্ম্মকোষের চতুর্দ্দিকে রক্তপদ্মের কোমল পাপ্‌ড়িগুলির মত স্তরে স্তরে বিকশিত হইয়া ছিল।

 ঘরে তাহার বাপ মা এবং দুটি ছোট ভাই ছাড়া আর কেহ ছিল না। ভাই দুটি সকাল সকাল খাইয়া ইস্কুলে যাইত, আবার ইস্কুল হইতে আসিয়া আহারান্তে সন্ধ্যার পর পাড়ার নাইট্‌ স্কুলে পাঠ অভ্যাস করিতে গমন করিত। বাপ সামান্য বেতন পাইতেন, ঘরে মাষ্টার রাখিবার সামর্থ্য ছিল না।

 কাজের অবসরে হেম তাহার নির্জ্জন ঘরের বাতায়নে আসিয়া বসিত। একদৃষ্টে রাজপথের লোক চলাচল দেখিত;