পাতা:গল্প-দশক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪২

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৩৪
গল্প-দশক।

মোহিতের পায়ে ধরিল, বলিল, “ওগো, পায়ে পড়ি আমাকে আমার বাড়ি রেখে এস!” মোহিত শশব্যস্ত হইয়া তাহার মুখ চাপিয়া ধরিল—গাড়ি দ্রুতবেগে চলিতে লাগিল।

 জলনিমগ্ন মরণাপন্ন ব্যক্তির যেমন মুহূর্ত্তের মধ্যে জীবনের সমস্ত ঘটনাবলী স্পষ্ট মনে পড়ে তেমনি সেই দ্বাররুদ্ধ গাড়ির গাঢ় অন্ধকারের মধ্যে হেমশশির মনে পড়িতে লাগিল, প্রতিদিন আহারের সময় তাহার বাপ তাহাকে সম্মুখে না, লইয়া খাইতে বসিতেন না;—মনে পড়িল তাহার সর্ব্বকনিষ্ঠ ভাইটি ইস্কুল হইতে আসিয়া তাহার দিদির হাতে খাইতে ভালবাসে; মনে পড়িল, সকালে সে তাহার মায়ের সহিত পান সাজিতে বসিত এবং বিকালে মা তাহার চুল বাঁধিয়া দিতেন। ঘরের প্রত্যেক ক্ষুদ্র কোণ এবং দিনের প্রত্যেক ক্ষুদ্র কাজটি তাহার মনের সম্মুখে জাজ্জল্যমান হইয়া উঠিতে লাগিল। তখন তাহার নিভৃত জীবন এবং ক্ষুদ্র সংসারটিকেই স্বর্গ বলিয়া মনে হইল। সেই পানসাজা, চুলবাঁধা, পিতার আহারস্থলে পাখা করা, ছুটির দিনে মধ্যাহ্ননিদ্রার সময় তাঁহার পাকাচুল তুলিয়া দেওয়া, ভাইদের দৌরাত্ম্য সহ্য করা,—এ সমস্তই তাহার কাছে পরম-শান্তিপূর্ণ দুর্লভ সুখের মত বোধ হইতে লাগিল, —বুঝিতে পারিল না এ সব থাকিতে সংসারে আর কোন্ সুখের আবশ্যক আছে!

 মনে হইতে লাগিল, পৃথিবীতে ঘরে ঘরে সমস্ত কুলকন্যারা এখন গভীর সুষুপ্তিতে নিমগ্ন। সেই আপনার ঘরে আপনার