পাতা:গল্প-দশক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬০

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৫২
গল্প-দশক।

 ডাক্তার হাসিয়া বলিলেন—উনি মা’লক্ষ্মী, চিরকাল পরের সেবা করিয়া আসিয়াছেন, অন্যের সেবা সহিতে পারেন না।

 কন্যাকে লইয়া ডাক্তার গমনের উদ্যোগ করিতেছেন এমন সময় আমার স্ত্রী বলিলেন, ডাক্তার বাবু, ইনি বদ্ধঘরে অনেকক্ষণ বসিয়া আছেন, ইহাকে একবার বাহিরে বেড়াইয়া লইয়া আসিতে পারেন?

 ডাক্তার বাবু আমাকে কহিলেন, আসুন না, আপনাকে নদীর ধার হইয়া একবার বেড়াইয়া আনি।–

 আমি ঈষৎ আপত্তি দেখাইয়া অনতিবিলম্বে সম্মত হইলাম। ডাক্তার বাবু যাইবার সময় দুই শিশি ঔষধ সম্বন্ধে আবার আমার স্ত্রীকে সতর্ক করিয়া দিলেন।

 সে দিন ভাক্তারের বাড়িতেই আহার করিলাম। ফিরিয়া আসিতে রাত হইল। আসিয়া দেখি, আমার স্ত্রী ছট্‌ফট্‌ করিতেছেন। অনুতাপে বিদ্ধ হইয়া জিজ্ঞাসা করিলাম তোমার কি ব্যথা বাড়িয়াছে?

 তিনি উত্তর করিতে পারিলেন না, নীরবে আমার মুখের দিকে চাহিলেন। তখন তাঁহার কণ্ঠ রোধ হইয়াছে।

 আমি তৎক্ষণাৎ সেই রাত্রেই ডাক্তারকে ডাকাইয়া আনিলাম। ডাক্তার প্রথমটা আসিয়া অনেকক্ষণ কিছুই বুঝিতে পারিলেন না। অবশেষে জিজ্ঞাসা করিলেন, সেই ব্যথাটা কি বাড়িয়া উঠিয়াছে? ঔষধটা একবার মালিশ করিলে হয় না?

 বলিয়া শিশিটা টেবিল হইতে লইয়া দেখিলেন সেটা খালি।