পাতা:গৃহদাহ - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/১৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গহীদাহ SS চোখের উপর সম্পন্ট দেখিতে লাগিল। এমনি কত কি যে সখের সর্বপ্ন দিবানিশি তাহার মাথার মধ্যে ঘরিয়া বেড়াইতে লাগিল, তার ইয়াত্তা নাই । আর সকল কথার মধ্যে স্বামী যে তাহাকে ছাড়িয়া আর সবগে যাইতেও ভরসা করেন না, এই কথাটা মিশিয়া যেন তাহার সমস্ত চিন্তাকে একেবারে মধ্যময় করিয়া তুলিল। আর তাহার কাহারও বিরদ্ধে কোন ক্ষোভ, কোন নালিশ রহিল না-অন্তরের সমস্ত গ্লানি ধইয়া মছিয়া গিয়া হৃদয় গঙ্গাজলের মত নিমলি ও পবিত্র হইয়া উঠিল । আজ তাহার বড় সাধ হইতে লাগিল, যাইবার আগে একবার মণিালকে দেখে এবং সমস্ত বািক দিয়া তাহাকে জড়াইয়া ধরিয়া জানা-অজানা সকল অপরাধের ক্ষমা-ভিক্ষা মাগিয়া। লয়। আর সরেশের জন্য তাহার প্রাণ কাঁদিতে লাগিল। সে যে পরম বন্ধ হইয়াও লজ্জায় সন্তেকাচে তাহদের দেখা দিতে পারে না, তাহার এই দভাগোর গোপন বেদনটি সে আজ যেমন অন্যভব করিল, এমন বোধ করি কোনদিন করে। নাই। তাঁহারও কাছে সবান্তঃকরণে ক্ষমা চাহিয়া বিদায় লইবার আছে। কিন্তু অন্যাসন্ধান করিয়া জানিল, তিনি কাল হইতেই গহে নাই । যাইবার দিন সকাল হইতেই আকাশে মেঘ করিয়া টিপি টিপি বশিষ্ট পড়িতে আরম্ভ করিয়াছিল । জিনিসপত্র বিধি-ছাদা হইয়াছে, কিছ কিছ সেন্টশনও পাঠানো হইয়াছে, টিকিট পর্যন্ত কেনা হইয়া গিয়াছে । অচলার জন্যও সেকেণীড় ক্লাস টিকিট কেনার প্রস্তাব হইয়াছিল, কিন্তু সে ঘোরতর আপত্তি তুলিয়া মহিমকে বলিয়াছিল, টাকা মিথ্যে নষ্ট করবার সাধ থাকে। ত কিনতে দাও গে। আমি সস্থ সবল, তা ছাড়া কত বড়লোকের মেয়েরা ইনটার ক্লাসের মেয়েগাড়িতে যাচ্ছে, আর আমি পারিনে ? আমি দেড়া ভাড়ার বেশী কোনমতেই যাবো না । সতরাং সেইরূপ ব্যবস্থাই হইয়াছিল। সম্পণে দটা দিন সমরেশের দেখা নাই । কিন্তু আজ সকালে দিযোগের জন্যই হোক বা অপর কোন কারণেই হোক, সে তাহার পড়িবার ঘরে ছিল । এই আনন্দহীন৷ কক্ষের মধ্যে অচলা ঠিক যেন একটা বসন্তের দমকা বাতাসের মত গিয়া প্রবেশ করিল। তাহার কণ্ঠস্বরে আনন্দের আতিশয্য উপচাইয়া পড়িতেছিল ; বলিল সরেশাবাব, এ জন্ম আমাদের অ্যার মািখ দেখবেন না নাকি ? এত বড় অপরাধটা কি করেছি, বলেন তা ? সরেশ চিঠি লিখিতেছিল, মাখ তুলিয়া চাহিল। তাহদের বাড়ি পড়িয়া গেলে আশেপাশে গাছগলার যে চেহারা অচলা আসিবার দিন চক্ষে দেখিয়া আসিয়াছিল, সরেশের এই মাখখােনা এমনি করিয়াই তাহদের স্মরণ করাইয়া দিল যে, সে মনে মনে শিহরিয়া উঠিল । বসন্তের হাওয়া ফিরিয়া গেল—সে কি বুলিতে আসিয়াছিল, সব ভুলিয়া কাছে আসিয়া উদ্বিগ্নকণ্ঠে জিজ্ঞাসা করিল, তোমার কি অসংখ করেচে, সরেশ বাবা ? কৈ, আমাকে ত এ কথা বলনি । শধ পলিকের নিমিত্তই সমরেশ মাখ তুলিয়াছিল। তৎক্ষণাৎ নত করিয়া কহিল, না, আমার কোন অসংখ করেনি, আমি ভালই আছি ; বলিয়া সেই বইখানার পাতা