পাতা:গৃহদাহ - শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.pdf/৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গহীদাহ ܦ দীঘনশ বাস মোচন করিলেন । অচলা তেমনি নিরািত্তর অধোমখে বসিয়া রহিল । কেদারবাব ক্ষণকাল স্তৱদ্ধভাবে বসিয়া থাকিয়া হঠাৎ বলিয়া উঠিলেন, আচ্ছা, আমাদের একখানা টেলিগ্রাফ করে কি তার খবর নেওয়া উচিত নয় ? তার এ বিপদের দিনেও কি আমাদের অভিমান করা সাজে ? এবার অচলা মািখ তুলিয়া কহিল, কিন্তু আমরা ত তাঁর ঠিকানা জানিনে বাবা । কেদারবাব, বলিলেন, ঠিকানা । ফয়জাবাদ শহরে এমন কেউ কি আছে যে আমাদের সরেশকে আজ চেনে না ? তার ওপর আমার রাগ খাবই হয়েছিল, কিন্তু এখন আর আমার কিছ মনে নেই। একখানা টেলিগ্রাম লিখে এখখনি পাঠিয়ে দাও মা ; আমি তার সংবাদ জানিবার জন্যে বড় ব্যাকুল হয়ে উঠেছি । এখনি দিচ্চি বাবা, বলিয়া সে একখানা টেলিগ্রাফের কাগজ আনিতে ঘরের বাহির হইয়া একেবারে সরেশের সম্পম খেই পড়িয়া গেল । অন্তরে গম্ভীর দঃখ, বহন করার ক্লান্তি এত শীঘ্ৰ মানষের মনকে যে এমন শক্ষিক এমন শ্ৰীহীন করিয়া দিতে পারে, জীবনে আজ অচলা এই প্রথম দেখিতে পাইয়া চমকাইয়া উঠিল । খানিকক্ষণ পর্যন্ত কাহারও মািখ দিয়া কথা বাহির হইল না। তার পরে সে-ই কথা কহিল। বলিল, বাবা বসে আছেন ; আসান ঘরে আসন । ফয়জাবাদ থেকে কবে এলেন ? ভাল আছেন। আপনি ? . অজ্ঞাতসারে তাহার কন্ঠস্বরে যে কতখানি স্নেহের বেদনা প্ৰকাশ পাইল, তাহা সে নিজেটের পাইল না ; কিন্তু সরেশ একেবারে ভাঙ্গিয়া পড়িবার মত হইল ; কিন্তু তবও আজ সে তাহার বিগত দিনের কঠোর শিক্ষাকে নিস্ফল হইতে দিল না । সেই দটি আরক্ত পদতলে তৎক্ষণাৎ জানা পাতিয়া বসিয়া পড়িয়া তাহার অগাধ দাম্প্রকৃতির সমস্তটুকু নিঃশেষে উজাড় করিয়া দিবার দরজায় সাপাহাকে আজ সে প্রাণপণবলে নিবারণ করিয়া লইয়া, সসম্পদ্রমে কহিল, আমার ফয়জাবাদে থাকবার কথা। আপনি কি করে জানলেন ? অচলা তেমনি স্নেহদ্রাসবারে বলিল, খবরের কাগজে এইমাত্র দেখে বাবা আমাকে টেলিগ্রাফ করতে বলছিলেন । আপনার জন্যে তিনি বড় উদ্বিগ্ন হয়ে আছেন-আসন একবার তাঁকে দেখা দেবেন, বলিয়া সে ফিরিবার উপক্ৰম করিতেই সরেশ বলিয়া উঠিল, হয়ত পারেন, কিন্তু তুমি আমাকে কি মাপ করলে অচলা ? অচলার ওঠা ধরে একটুখানি হাসির আভা দেখা দিল। কহিল, সে প্রয়োজনই আমার হয়নি। আমি একটি দিনের জন্যেও আপনার ওপর রাগ করিনি,-আসন ঘরে আসন ।