পাতা:গোড়ায় গলদ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোড়ায় গলদ 이 করছিলেন তখন কেমন— আমি ককখনো নিমাই গয়লাকে— সেই বুড়ো ডাক্তারের ছেলেকে বিয়ে করব না। ককখনো না। সেই বুড়োটার উপর আমার এমন রাগ ধরছে — আজ একবার ক্ষান্তদিদির কাছে যেতে হচ্ছে, তার কাছ থেকে সমস্ত সন্ধান পাওয়া যাবে। কমলমুখীর প্রবেশ দিদিভাই, তুমি যে বলতে কাননকুসুমিকা তোমার আদবে ভালো লাগে না, তা হলে বইখানা আর-একবার তো ফিরে পড়তে হবে— এবারে বোধ করি মত একটু-আধটু বদলাতেও পারে। কমলমুখী। আমি ভাই, দরকার বুঝে মত বদলাতে পারি নে। ইন্দুমতী। তা ভাই, শুনেছি স্বামীর জন্যে সবই করতে হয়— জীবনের অনেকখানি নতুন করে বদলে ফেলতে হয়। বিধাতা তো আর আমাকে ঠিক তার শ্রীচরণকমলের মাপ নিয়ে বানান নি। স্বামীরা আবার কোথাও একটু আঁট সইতে পারেন না। কমলমুখী। তা আমরা তাদের মনের মতো মত বদলাতে না পারলে তারা তো আমাদের বদলে ফেলতে পারেন— তাতে তো কেউ বাধা দেবার নেই। আমি যা আছি তা আছি, এতদিন পরে যে কারও মনোরঞ্জনের জন্যে আবার ধার-করা মালমসলা নিয়ে আপনাকে ফরমাশে গড়তে হবে সে তো ভাই, আর পারব না । এতে যদি কারও পছন্দ না হয় তো সে আমার অদৃষ্টের দোষ । ইন্দুমতী। কিন্তু তোর তো সে কথা বলবার জো নেই, তাকে তো তোর পছন্দ করতেই হবে । কমলমুখী। আমি তো আর স্বয়ম্বরা হতে যাচ্ছি নে বোন, তা আমার আবার পছন্দ ! দুটো-একটা কাপড়চোপড় ছাড়া জীবনের কটা জিনিসই বা নিজের পছন্দ অনুসারে পাওয়া গেছে! বিধাতা কোনো বিষয়ে কারও তো মত জিজ্ঞাসা করেন না। আপনাকেই আপনি পছন্দ করে নিতে পারি নি। যদি পারতুম তা হলে বোধ হয় এর চেয়ে ঢের ভালো মানুষটিকে পেতুম— কিন্তু তবু তো আপনাকে কম ভালোবাসি নে— তাকেও বোধ হয় তেমনি ভালোবাসব ! ইন্দুমতী। তুই ভাই, কথায় কথায় বড়ো বেশি গম্ভীর হয়ে পড়িস। বিনোদের কাছে যদি আমনি করে থাকিস তা হলে সে তোর সঙ্গে প্রেমালাপ করতে সাহস করবে না— কমলমুখী। সেজন্যে নাহয় তুই নিযুক্ত থাকিস । ইন্দুমতী। তা হলে যে তোর গাম্ভীর্য আরো সাত গুণ বেড়ে যাবে। দেখ ভাই, তুই তো একটা পোষা কবি হাতে পেলি, এবার তাকে দিয়ে তোর নিজের নামে কবিতা লিখিয়ে নিস— যতক্ষণ পছন্দ না হয় ছাড়িস নে— চাই কি, দুটো-একটা খুব মিষ্টি সম্বোধন নিজে বসিয়ে দিতে পারিস। নিজের নামে কবিতা দেখলে কী রকম লাগে কে জানে। * কমলমুখী । মনে হয়, আমার নাম করে আর কাকে লিখছে। তোর যদি শখ থাকে আমি তোর নামে একটা লিখিয়ে নেব— ইন্দুমতী । তুমি কেন, সে আমি নিজে করে নেব। আমার যে সম্পর্ক আমি যে কান ধরে লিখিয়ে নিতে পারি। তুমি তো তা পারবে না! কমলমুখী। সে যখনকার কথা তখন হবে, এখন তোর চুলটা বেঁধে দিই চল। ইন্দুমতী। আজ থাক ভাই। আমি এখন ক্ষান্তদিদির ওখানে যাচ্ছি। আমার ভারি দরকার আছে।