পাতা:গোড়ায় গলদ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

〉bア গোড়ায় গলদ চতুর্থ দৃশ্য চন্দ্রকান্তের অন্তঃপুর ক্ষান্তমণি ও ইন্দুমতী ক্ষান্তমণি। তোমরা ভাই নানারকম বই পড়েছ, তোমরা বলতে পার কী করলে ভালো হয়। ইন্দুমতী। তোমার স্বামী ঠাট্টা করে বলে, সে কি আর সত্যি। ক্ষান্তমণি। না ভাই, ঠাট্টা কি সত্যি ঠিক বুঝতে পারি নে। আর, সত্যি হবারই বা আটক কী। আমার বাপ-মা আমাকে ঘরকন্না ছাড়া আর তো কিছুই শেখায় নি। এদানিং বাংলা বইগুলো সব পড়ে নিয়েছি, তাতে অনেকরকম কথাবার্তা আছে কিন্তু সেগুলো নিয়ে কোনো সুবিধে করতে পারছি নে। আমার স্বামী যেরকম চায় সে ভাই আমাকে কিছুতেই মানায় না। ইন্দুমতী । তোমার স্বামীর আবার তেমনি সব বন্ধু জুটেছে, তারাই পাঁচজনে পাচ কথা কয়ে তার মত উতলা করে দেয় । বিশেষ, সেদিন বিনোদবাবু আর তোমার স্বামীর সঙ্গে আর-একটি কে বাবু আমাদের বাড়িতে গিয়েছিল, তাকে দেখে আমার আদবে ভালো লাগল না। লোকটা কে ভাই । ক্ষান্তমণি। কী জানি ভাই। বন্ধু একটি-আধটি তো নয়, সবগুলোকে আবার চিনিও নে। ললিতবাবু হবে বুঝি। ইন্দুমতী। (স্বগত) নিশ্চয় ললিতবাবু হবে। নাম শুনেই মনে হচ্ছে তার নাম বটে। ক্ষান্তমণি। কী রকম বলো দেখি। সুন্দর-হানো ? পাতলা ? ইন্দুমতী । হা— ক্ষাত্তমণি। চোখে চশমা আছে ? ইন্দুমতী। হা হা, চশমা আছে—আর সকল কথাতেই মুচকে মুচকে হাসে— দেখে গা জ্বলে যায়। ক্ষান্তমণি। তবে আমাদের ললিত চাটুজ্জে তার আর সন্দেহ নেই। ইন্দুমতী। ললিত চাটুজে । ক্ষান্তমণি। জান না ? ঐ কলুটোলার নৃত্যকালী চাটুজ্জের ছেলে। ছোকরাটি কিন্তু মন্দ না ভাই। এম.এ. পাস করে জলপানি পাচ্ছে । ইন্দুমতী। ওদের ঘরে স্ত্রীপুত্রপরিবার কেউ নেই নাকি! অমনতরো লক্ষ্মীছাড়ার মতো যেখানে-সেখানে টো টো করে ঘুরে বেড়ায় কেন। ক্ষান্তমণি। স্ত্রীপুত্র থেকেই বা কী হয়। ওর তো তবু নেই। ললিত আবার বাপকে বলেছে রোজগার না করে সে বিয়ে করবে না। সে কথা যাক। এখন আমাকে একটা পরামর্শ দে না ভাই। ইন্দুমতী। আচ্ছা, এক কাজ করা যাক। মনে করো আমি চন্দ্রবাবু; আপিস থেকে ফিরে এসেছি, খিদেয় প্রাণ বেরিয়ে যাচ্ছে—তার পরে তুমি কী করবে বলো দেখি। রোসো ভাই, চন্দ্রবাবুর ঐ চাপকান আর শামলাটা পরে নিই, নইলে আমাকে চন্দ্রবাবু মনে হবে না। [আপিসের বেশ পরিধান ও ক্ষান্তমণির উচ্চহাস্য (গষ্ঠীর ভাবে) ক্ষান্তমণি, স্বামীর প্রতি এরূপ পরিহাস অত্যন্ত গৰ্হিত কার্য। কোনো পতিব্ৰতা রমণী স্বামীর সমক্ষে কদাপি উচ্চহাস্য করেন না। যদি দৈবাৎ কোনো কারণে হাস্য অনিবার্য হইয়া উঠে তবে সাধবী স্ত্রী প্রথমে স্বামীর অনুমতি লইয়া পরে বদনে অঞ্চল দিয়া ঈষৎ হাসিতে পারেন । যা হোক আমি আপিস থেকে ফিরে এসেছি— এখন তোমার কী কর্তব্য বলো । ক্ষান্তমণি। প্রথমে তোমার চাপকানটি এবং শামলাটি খুলে দিই, তার পরে জলখাবার— ইন্দুমতী। নাং, তোমার কিছু শিক্ষা হয় নি। আমি তোমাকে সেদিন এত করে দেখিয়ে দিলুম, কিছু মনে নেই ?