পাতা:গোড়ায় গলদ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোড়ায় গলদ Ջծ দ্বিতীয় অঙ্ক প্রথম দৃশ্য নিমাইয়ের ঘর নিমাই লিখিতে প্রবৃত্ত নিমাই। মুখে এত কথা অনর্গল বকে যাই কিছু বাধে না, সেইগুলোই চোদ্দটা অক্ষরে ভাগ করা যে এত মুশকিল তা জানতুম না। কাদম্বিনী যেমনি আমায় প্রথম দেখিলে, কেমন করে ভূত্য বলে তখনি চিনিলে । ভাবটা বেশ নতুন রকমের হয়েছে কিন্তু কিছুতেই এই হতভাগা ছন্দ বাগাতে পারছি নে। (গণনা করিয়া) প্রথম লাইনটা হয়েছে ষোলো, দ্বিতীয়টা হয়ে গেছে পনেরো। ওর মধ্যে একটা অক্ষরও তো বাদ দেবার জো দেখছি নে। (চিন্তা) “আমায়” কে “আমা” বললে কেমন শোনায় ?— ‘কাদম্বিনী যেমনি আমা প্রথম দেখিলো— আমার কানে তো খারাপ ঠেকছে না। কিন্তু তবু একটা অক্ষর বেশি থাকে। কাদম্বিনীর “নীটিা কেটে যদি সংক্ষেপ করে দেওয়া যায় ! পুরো নামের চেয়ে সে তো আরো আদরের শুনতে হবে। “কাদম্বি”— না— কই তেমন আদরের শোনাচ্ছে না তো। “কদম্ব”— ঠিক হয়েছে— কদম্ব যেমনি আমা প্রথম দেখিলে কেমন করে ভূত্য বলে তখনি চিনিলে ! উহু, ও হচ্ছে না। দ্বিতীয় লাইনটাকে কাবু করি কী করে ? “কেমন করে” কথাটাকে তো কমাবার জো নেই— এক “কেমন করিয়া” হয়— কিন্তু তাতে আরো একটা অক্ষর বেড়ে যায়। “তখনি চিনিলে’র জায়গায় “তৎক্ষণাৎ চিনিলে” বসিয়ে দিতে পারি কিন্তু তাতে বড়ো সুবিধে হয় না, এক দমে কতকগুলো অক্ষর বেড়ে যায়। ভাষাটা আমাদের বহু পূর্বে তৈরি হয়ে গেছে, কিছুই নিজে বানাবার জো নেই– অথচ ওরই মধ্যে আবার কবিতা লিখতে হবে! দূর হোক গে, ও পনেরো অক্ষরই থাক—কানে খারাপ না লাগলেই হল। ও পনেরোও যা ষোলোও তা সতেরোও তাই, কানে সমানই ঠেকে, কেবল পড়বার দোষেই খারাপ শুনতে হয় । চোদ্দ অক্ষর, ও একটা প্রেজুডিস । শিবচরণের প্রবেশ শিবচরণ। কী হচ্ছে নিমাই। নিমাই। আজ্ঞে অ্যানাটমির নোটগুলো একবার দেখে নিচ্ছি, একজামিন খুব কাছে এসেছে— শিবচরণ। দেখো বাপু, একটা কথা আছে । তোমার বয়স হয়েছে, তাই আমি তোমার জন্যে একটি কন্যা ঠিক করেছি । নিমাই। কী সর্বনাশ । শিবচরণ। নিবারণবাবুকে জান বোধ করি— নিমাই। আজ্ঞে হা জানি। শিবচরণ। তারই কন্যা ইন্দুমতী। মেয়েটি দেখতে শুনতে ভালো। বয়সেও তোমার যোগ্য। দিনও একরকম স্থির করা হয়েছে। নিমাই। একেবারে স্থির করেছেন ? কিন্তু এখন তো হতে পারে না। শিবচরণ। কেন বাপু। নিমাই । আমার এখন একজামিন কাছে এসেছে— শিবচরণ। তা হোক-না একজামিন। বিয়ের সঙ্গে একজামিনের যোগটা কী। বউমাকে বাপের