পাতা:গোড়ায় গলদ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোড়ায় গলদ ૨Q বাজনা নেই, আলো নেই, উলু নেই, শাখ নেই, তার পরে যদি আবার অন্তিমবালের বোলচাল দিতে আরম্ভ কর তা হলে তো আর বাচি নে ! ভূপতি। মিছে না! চন্দরদার ও-সমস্ত মুখের আস্ফালন বেশ জনি—এ দিকে রাত্তির দশটার পর যদি আর এক মিনিট ধরে রাখা যায়, তা হলে ব্রাহ্মণ বিরহের জ্বালায় একেবারে অস্থির হয়ে পড়ে— চন্দ্রকান্ত। ভূপতির আর কোনো গুণ না থাক ও মানুষ চেনে তা স্বীকার করতে হয়। ঘড়িতে ঐ-যে ছুচোলো মিনিটের কাটা দেখছ উনি যে কেবল কানের কাছে টিক টিক করে সময় নির্দেশ করেন তা নয় অনেক সময় প্যাট প্যাট করে বেঁধেন—মন-মাতঙ্গকে অঙ্কুশের মতো গৃহাভিমুখে তাড়না করেন। রাত্তির দশটার পর আমি যদি বাইরে থাকি তা হলে প্রতি মিনিট আমাকে একটি করে খোচা মেরে মনে করিয়ে দেন ঘরে আমার অন্ন ঠাণ্ডা এবং গৃহিণী গরম হচ্ছেন।— বিনুদার ঘড়ির সঙ্গে আজকাল কোনো সম্পর্কই নেই— এবার থেকে ঘড়ির ঐ চন্দ্ৰবদনে নানারকম ভাব দেখতে পাবেন— কখনো প্রসন্ন কখনো ভীষণ । ( নিমাইয়ের প্রতি ) আচ্ছা ভাই বৈজ্ঞানিক, তুমি আজ আমন চুপচাপ কেন। এমন করলে তো চলবে না। শ্ৰীপতি। সত্যি, বিনু যে বিয়ে করতে যাচ্ছে তা মনে হচ্ছে না। আমরা কতকগুলো পুরুষমানুষে জটলা করেছি— কী করতে হবে কেউ কিছু জানি নে—মহা মুশকিল! চন্দরদী, তুমি তো বিয়ে করেছ, বলো-না কী করতে হবে— হা করে সবাই মিলে বসে থাকলে কি বিয়ে-বিয়ে মনে হয়। চন্দ্রকান্ত। আমার বিয়ে— সে যে পুরাতত্ত্বের কথা হল— আমার স্মরণশক্তি ততদূর পৌছয় না। কেবল বিবাহের যেটি সর্বপ্রধান আয়োজন, যেটিকে কিছুতে ভোলবার জো নেই, সেইটিই অন্তরে বাহিরে জেগে আছে, মন্তর-তত্তর পুরুত-ভাট সে সমস্ত ভুলে গেছি। ভূপতি। বাসরঘরে শ্যালীর কানমলা ? চন্দ্রকান্ত। হায় পোড়াকপাল! শ্যালীই নেই তো শ্যালীর কানমলা— মাথা নেই তার মাথাব্যথা ! শ্যালী থাকলে তবু তো বিবাহের সংকীর্ণতা অনেকটা দূর হয়ে যায়— ওরই মধ্যে একটুখানি নিশ্বেস ফেলবার, পাশ ফেরবার জায়গা পাওয়া যায়— শ্বশুরমশায় একেবারে কড়ায়-গণ্ডায় ওজন করে দিয়েছেন, সিকিপয়সার ফাউ দেন নি। h বিনোদবিহারী । বাস্তবিক— বর মনোনীত করবার সময় যেমন জিজ্ঞাসা করে, কটি পাস আছে, কনে বাছবার সময় তেমনি খোজ নেওয়া উচিত কটি ভগ্নী আছে । # চন্দ্রকান্ত। চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে— ঠিক বিয়ের দিনটিতে বুঝি তোমার চৈতন্য হল ? তা তোমারও একটি আছে শুনেছি তার নামটি হচ্ছে ইন্দুমতী—স্বভাবের পরিচয় ক্রমে পাবে। নিমাই। (স্বগত) র্যাকে আমার স্বন্ধের উপরে উদ্যত করা হয়েছে— সর্বনাশ আর কী ! শ্ৰীপতি। এ দিকে যে বেরোবার সময় হয়ে এল তা দেখছ ? এতক্ষণ কী যে হল তার ঠিক নেই! নিদেন ইংরেজ ছোড়াগুলোর মতো খুব খানিকটা হো হো করতে পারলেও আসর গরম হয়ে উঠত। ుణా శా శాeజా శాశి -(ణాళా శా శాకా পেতে ।” চন্দ্রকান্ত । আরে থাম থাম—তোর পায়ে পড়ি ভাই, থাম ; দেখ আর্য ঋষিগণ যে রাগরাগিণীর সৃষ্টি করেছিলেন সে কেবল লোকের মনোরঞ্জনের জন্যে— কোনোরকম নিষ্ঠুর অভিপ্রায় তাদের ছিল না। ভূপতি। এসো তবে বরকনের উদ্দেশে খ্ৰী চিয়ার্স দিয়ে বেরিয়ে পড়া যাক—হিপ হিপ হুরে— চন্দ্রকান্ত। দেখো, আমার প্রিয় বন্ধুর বিয়েতে আমি কখনোই এরকম অনাচার হতে দেব না ; শুভকর্মে অমন বিদেশী শেয়াল-ডাক ডেকে বেরোলে নিশ্চয় অযাত্রা হবে। তার চেয়ে সবাই মিলে উলু দেবার চেষ্টা করো-না ! ঘুরে একটিমাত্র স্ত্রীলোক আছেন তিনি শাখ বাজাবেন এখন। আহা, এই সময়ে থাকত তার গুটি দুই-তিন সহোদরা তা হলে কোকিলকণ্ঠের উলু শুনে আজ কান জড়িয়ে যেত ।