পাতা:গোড়ায় গলদ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোড়ায় গলদ 86. কমলমুখী। না কাকা, তার কাছে ইন্দুর নাম করা হয় নি, আপনার মেয়ের কথা হচ্ছে তাও সে জানে না । নিবারণ। ইদিকে আবার শিবুকে কথা দিয়েছি তাকেই বা কী-বলি— আবার মেয়ের পছন্দ না হলে জোর করে বিয়ে দেওয়া সে আমি পারব না— একটি যা হয়ে গেছে তারই অনুতাপ রাখবার জায়গা পাচ্ছি নে । তুমি মা, ইন্দুকে বলে কয়ে ওদের দুজনের দেখা করিয়ে দিতে পার তো বড়ো ভালো হয় । আমি নিশ্চয় জানি ওরা পরস্পরকে একবার দেখলে পছন্দ না করে থাকতে পারবে না । নিমাই ছেলেটিকে বড়ো ভালো দেখতে— তাকে দর্শন মাত্রেই স্নেহ জন্মায় । কমলমুখী। নিমাইয়ের মনের ইচ্ছে কী সেটাও তো জানতে হবে কাকা। আবার কি এইরকম একটি কাণ্ড বাধানো ভালো। নিবারণ। সে আমি তার বাপের কাছে শুনেছি। সে বলে আমি উপার্জন না করে বিয়ে করব না। সে তো আমার মেয়েকে কখনো চক্ষে দেখে নি। একবার দেখলে ও-সব কথা ছেড়ে দেবে। বিশেষ, তার বাপ তাকে খুব পীড়াপীড়ি করছে। আমি চন্দ্রবাবুকে বলে তাকে একবার ইন্দুর সঙ্গে দেখা করতে রাজি করব। চন্দ্রবাবুর কথা সে খুব মানে। কমলমুখী। তা, ইন্দুকে আমি সম্মত করাতে পারব। [নিবারণের প্রস্থান ইন্দুমতীর প্রবেশ কমলমুখী। লক্ষ্মী দিদি আমার, আমার একটি অনুরোধ তোকে রাখতে হবে। ইন্দুমতী। কী বল-না ভাই । কমলমুখী। একবার নিমাইবাবুর সঙ্গে তুই দেখা কর। ইন্দুমতী। কেন দিদি, তাতে আমার কী প্রায়শ্চিত্তটা হবে। কমলমুখী। দেখ ইন্দু, এ তো ভাই ইংরেজের ঘর নয়, তোকে তো বিয়ে করতেই হবে। মনটাকে অমন করে বন্ধ করে রাখিস নে—-তুই যা মনে করিস ভাই, পুরুষমানুষ নিতান্তই বাঘভালুকের জাত নয়—বাইরে থেকে খুব ভয়ংকর দেখায়, কিন্তু ওদের বশ করা খুব সহজ। একবার পোষ মানলে ঐ মস্ত প্রাণীগুলো এমনি গরিব গোবেচারা হয়ে থাকে যে দেখে হাসি পায়। পুরুষমানুষের মধ্যে তুই কি ভদ্রলোক দেখিস নি। কেন ভাই, কাকার কথা একবার ভেবে দেখ-না । ইন্দুমতী। তুই আমাকে এত কথা বলছিস কেন দিদি। আমি কি পুরুষমানুষের দুয়োরে আগুন দিতে যাচ্ছি। তারা খুব ভালো লোক, আমি তাদের কোনো অনিষ্ট করতে চাই নে। কমলমুখী। তোর যখন যা ইচ্ছে তাই করেছিস ইন্দু, কাকা তাতে কোনো বাধা দেন নি। আজ কাকার একটি অনুরোধ রাখবি নে ? ইন্দুমতী ৷ রাখব ভাই—তিনি যা বলবেন তাই শুনব । কমলমুখী। তবে চল, তোর চুলটা একটু ভালো করে দিই। নিজের উপরে এতটা অযত্ব করিস নে |