পাতা:গোড়ায় গলদ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৪

( ર গোডায় গলদ চতুর্থ দৃশ্য ঘর শিবচরণ নিমাই নিবারণ ও চন্দ্রকান্ত চন্দ্রকান্ত । সমস্ত ঠিক হয়ে গেছে। শিবচরণ। কী হল বল দেখি। চন্দ্রকান্ত। ললিতের সঙ্গে কাদম্বিনীর বিবাহ স্থির হয়ে গেল। নিবারণ। সে কী ! সে যে বিবাহ করবে না শুনলুম ? চন্দ্রকান্ত। সে তো স্ত্রীকে বিবাহ করছে না। তার টাকা বিয়ে করে টাকাটি সঙ্গে নিয়ে বিলেত যারে। যা হোক, এখন আর-একবার আমাদের নিমাইবাবুর মত নেওয়া উচিত— ইতিমধ্যে যদি আবার বদল হয়ে থাকে। শিবচরণ। ( ব্যস্তভাবে ) না না, আর মত বদলাতে সময় দেওয়া হবে না। তার পূর্বেই আমরা পাচজনে পড়ে কোনো গতিকে ওর বিয়েটা দিয়ে দিতে হচ্ছে । চলো নিমাই, অনেক আয়োজন করবার আছে । ( নিবারণের প্রতি ) তবে চললেম ভাই । নিবারণ। এসো। [নিমাই ও শিবচরণের প্রস্থান চন্দরবাবু, আপনার তো খাওয়া হল না, কেবল ঘুরে ঘুরেই অস্থির হলেন— একটু বসুন, আপনার জন্যে জলখাবারের আয়োজন করে আসি গে। [ প্রস্থান ক্ষান্তমণি। এখন বাড়ি যেতে হবে ? না কী। চন্দ্রকান্ত। ( দেওয়ালের দিকে মুখ করিয়া ) নাঃ, আমি এখানে বেশ আছি। ক্ষান্তমণি। তা তো দেখতে পাচ্ছি। তা, চিরকাল এইখানেই কাটাবে না কি। চন্দ্রকান্ত। বিনুর সঙ্গে আমার তো সেইরকমই কথা হয়েছে। ক্ষান্তমণি। বিনু তোমার দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী কিনা, বিনুর সঙ্গে কথা হয়েছে! এখন ঢের হয়েছে, চলো । চন্দ্রকান্ত। (জিব কাটিয়া মাথা নাড়িয়া) সে কি হয়! বন্ধুমানুষকে কথা দিয়েছি এখন কি সে ভাঙতে পারি। ميپي ক্ষান্তমণি। আমার ঘাট হয়েছে, আমাকে মাপ করো তুমি। আমি আর কখনো বাপের বাড়ি গিয়ে থাকব না। তা, তোমার তো অযত্ন হয় নি— আমি তো সেখান থেকে সমস্ত রেধে তোমাকে পাঠিয়ে দিয়েছি। 劇 চন্দ্রকান্ত। বড়োবউ, আমি কি তোমার রান্নার জন্যে তোমাকে বিয়ে করেছিলুম। যে বৎসর তোমার সঙ্গে অভাগার শুভবিবাহ হয় সে বৎসর কলকাতা শহরে কি রাধুনি বামুনের মড়ক হয়েছিল। ক্ষান্তমণি। আমি বলছি, আমার একশো বার ঘাট হয়েছে, আমাকে মাপ করো— আমি আর কখনো এমন কাজ করব না। এখন তুমি ঘরে চলো। _ চন্দ্রকান্ত। তবে একটু রোসো। নিবারণবাবু আমার জলখাবারের ব্যবস্থা করতে গেছেন— উপস্থিত ত্যাগ করে যাওয়াটা শাস্ত্রবিরুদ্ধ। ক্ষান্তমণি। আমি সেখানে সব ঠিক করে রেখেছি, তুমি এখনি চলো। চন্দ্রকান্ত। বল কী, নিবারণবাবু— ক্ষান্তমণি। সে আমি নিবারণবাবুকে বলে পাঠাব এখন, তুমি চলো। - চন্দ্ৰকাত্ত। তবে চলো। সকল গোরগুলিই তো একে একে গোষ্ঠে গেল। আমিও যাই ।