পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১৪

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

হার মেনে যেতেন, এ আমি বাজি রেখে বলতে পারি। মনু-পরাশরের নীচেই পৃথিবীর মধ্যে সে একমাত্র তোমাকেই মানে। এখন তুমি যদি গতি করে দাও তো মেয়েটা তরে যায়। অমন পাত্র খুঁজলে পাওয়া যাবে না।

 এই বলিয়া গোরার সঙ্গে আজ ছাতে যা কথাবার্তা হইয়াছে মহিম তাহা সমস্ত বিবৃত করিয়া কহিলেন। বিনয়ের সঙ্গে গোরার একটা বিরোধ যে ঘনাইয়া উঠিতেছে, ইহা বুঝিতে পারিয়া আনন্দময়ীর মন অত্যন্ত উদ্‌বিগ্ন হইয়া উঠিল।

 আনন্দময়ী উপরে আসিয়া দেখিলেন, গোরা ছাতে বেড়ানো বন্ধ করিয়া ঘরে একটা চৌকির উপর বসিয়া আর-একটা চৌকিতে পা তুলিয়া বই পড়িতেছে। আনন্দময়ী তাহার কাছে একটা চৌকি টানিয়া লইয়া বসিলেন। গোরা সামনের চৌকি হইতে পা নামাইয়া খাড়া হইয়া বসিয়া আনন্দময়ীর মুখের দিকে চাহিল।

 আনন্দময়ী কহিলেন, “বাবা গোরা, আমার একটি কথা রাখিস- বিনয়ের সঙ্গে ঝগড়া করিস নে। আমার কাছে তোরা দুজনে দুটি ভাই- তোদের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটলে আমি সইতে পারব না।”

 গোরা কহিল, “বন্ধু যদি বন্ধন কাটতে চায় তবে তার পিছনে ছুটোছুটি করে আমি সময় নষ্ট করতে পারব না।”

 আনন্দময়ী কহিলেন, “বাবা, আমি জানি নে তোমাদের মধ্যে কী হয়েছে, কিন্তু বিনয় তোমার বন্ধন কাটাতে চাচ্ছে এ কথা যদি বিশ্বাস কর তবে তোমার বন্ধুত্বের জোর কোথায়?”

 গোরা। মা, আমি সোজা চলতে ভালোবাসি- যারা দু দিক রাখতে চায় আমার সঙ্গে তাদের বনবে না। দু নৌকোয় পা দেওয়া যার স্বভাব আমার নৌকো থেকে তাকে পা সরাতে হবে- এতে আমারই কষ্ট হোক আর তারই কষ্ট হোক।

 আনন্দময়ী। কী হয়েছে বল্‌ দেখি। ব্রাহ্মদের ঘরে সে যাওয়া-আসা করে, এই তো তার অপরাধ?

১০৪