পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪৭

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

মাটিতে পড়ে এবং মাটিতে পড়িলে সুযোগমত অঙ্কুরিত হইতে বাধা থাকে না। এ পর্যন্ত জীবনের ক্ষেত্র হইতে গোরা স্ত্রীলোককে একেবারেই সরাইয়া রাখিয়াছিল— সেটাকে একটা অভাব বা ক্ষতি বলিয়া সে কখনো স্বপ্নেও অনুভব করে নাই। আজ বিনয়ের অবস্থান্তর দেখিয়া সংসারে স্ত্রীজাতির বিশেষ সত্তা ও প্রভাব তাহার কাছে গোচর হইয়া উঠিয়াছে। কিন্তু ইহার স্থান কোথায়, ইহার প্রয়োজন কী, তাহা সে কিছুই স্থির করিতে পারে নাই, এইজন্য বিনয়ের সঙ্গে এ কথা লইয়া তর্ক করিতে তাহার ভালো লাগে না। বিষয়টাকে সে অস্বীকার করিতেও পারে না, আয়ত্ত করিতেও পারিতেছে না— এইজন্য ইহাকে আলোচনার বাহিরে রাখিতে চায়।

 রাত্রে বিনয় যখন বাসায় ফিরিতেছিল তখন আনন্দময়ী তাহাকে ডাকিয়া কহিলেন, “শশিমুখীর সঙ্গে বিনয় তোমার বিবাহ নাকি ঠিক হয়ে গেছে?”

 বিনয় সলজ্জ হাস্যের সহিত কহিল, “হাঁ মা, গোরা এই শুভকর্মের ঘটক।”

 আনন্দময়ী কহিলেন, “শশিমুখী মেয়েটি ভালো, কিন্তু বাছা, ছেলেমানুষি কোরো না। আমি তোমার মন জানি বিনয়— একটু দোমনা হয়েছ বলেই তাড়াতাড়ি এ কাজ করে ফেলছ। এখনো বিবেচনা করে দেখবার সময় আছে; তোমার বয়স হয়েছে বাবা— এতবড়ো একটা কাজ অশ্রদ্ধা করে কোরো না।”

 বলিয়া বিনয়ের গায়ে হাত বুলাইয়া দিলেন। বিনয় কোনো কথা না বলিয়া আস্তে আস্তে চলিয়া গেল।


১৮

 বিনয় আনন্দময়ীর কথা কয়টি ভাবিতে ভাবিতে বাসায় গেল। আনন্দময়ীর মুখের একটি কথাও এপর্যন্ত বিনয়ের কাছে কোনোদিন উপেক্ষিত হয় নাই। সে রাত্রে তাহার মনের মধ্যে একটা ভার চাপিয়া রহিল।

১৩৭