পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৫৩

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

যত বড়ো করে অনুভব করব ব্রাহ্মণের সম্মানকে তত বড়ো করে তুলতে হবে। সে সম্মান রাজার সম্মানের চেয়ে অনেক বেশি— সে সম্মান দেবতারই সম্মান। এ দেশে ব্রাহ্মণ যখন সেই সম্মানের যথার্থ অধিকারী হবে তখন এ দেশকে কেউ অপমানিত করতে পারবে না। আমরা কি রাজার কাছে মাথা হেঁট করি, অত্যাচারীর বন্ধন গলায় পরি? নিজের ভয়ের কাছে আমাদের মাথা নত, নিজের লোভের জালে আমরা জড়িয়ে আছি, নিজের মূঢ়তার কাছে আমরা দাসানুদাস। ব্রাহ্মণ তপস্যা করুন; সেই ভয় থেকে, লোভ থেকে, মূঢ়তা থেকে আমাদের মুক্ত করুন। আমরা তাঁদের কাছ থেকে যুদ্ধ চাই নে, বাণিজ্য চাই নে, আর কোনো প্রয়োজন চাই নে— তাঁরা আমাদের সমাজের মাঝখানে মুক্তির সাধনাকে সত্য করে তুলুন।

 পরেশবাবু এতক্ষণ চুপ করিয়া শুনিতেছিলেন, তিনি ধীরে ধীরে বলিলেন, “ভারতবর্ষকে যে আমি জানি তা বলতে পারি নে এবং ভারতবর্ষ যে কী চেয়েছিলেন এবং কোনোদিন তা পেয়েছিলেন কি না তা আমি নিশ্চয় জানি নে, কিন্তু যে দিন চলে গেছে সেই দিনে কি কখনো ফিরে পাওয়া যায়? বর্তমানে যা সম্ভব তাই আমাদের সাধনার বিষয়— অতীতের দিকে দুই হাত বাড়িয়ে সময় নষ্ট করলে কি কোনো কাজ হবে?”

 বিনয় কহিল, “আপনি যেমন বলেছেন আমিও ঐরকম করে ভেবেছি এবং অনেক বার বলেওছি— গোরা বলে যে, অতীতকে বলে বরখাস্ত করে বসে আছি বলেই কি সে অতীত? বর্তমানের হাঁকডাকের আড়ালে পড়ে সে আমাদের দৃষ্টির অতীত হয়েছে বলেই অতীত নয়, সে ভারতবর্ষের মজ্জার মধ্যে রয়েছে। কোনো সত্য কোনোদিনই অতীত হতে পারে না। সেইজন্যই ভারতবর্ষের এই সত্য আমাদের আঘাত করতে আরম্ভ করেছে। একদিন একে যদি আমাদের একজনও সত্য বলে চিনতে ও গ্রহণ করতে পারে তা হলেই আমাদের শক্তির খনির দ্বারে প্রবেশের পথ খুলে যাবে, অতীতের ভাণ্ডার বর্তমানের সামগ্রী হয়ে উঠবে। আপনি কি মনে করছেন ভারতবর্ষের কোথাও সেরকম সার্থকজন্মা লোকের আবির্ভাব হয় নি?”

১৪৩