পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৫৭

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

ভালো লাগে।”

 ললিতা কহিল, “তিনি কিনা কেবলই গৌরবাবুর কথাই বলেন, সেইজন্য তোমার ভালো লাগে।”

 সুচরিতা এ কথাটার ভিতরকার ইঙ্গিতটা বুঝিয়াও বুঝিল না। সে একটা সরল ভাব ধারণ করিয়া কহিল, “তা সত্য, ওঁর মুখ থেকে গৌরবাবুর কথা শুনতে আমার ভারি আনন্দ হয়। আমি যেন তাঁকে স্পষ্ট দেখতে পাই।”

 ললিতা কহিল, “আমার তো কিছু ভালো লাগে না— আমার রাগ ধরে।”

 সুচরিতা আশ্চর্য হইয়া কহিল, “কেন?”

 ললিতা কহিল, “গোরা, গোরা, গোরা, দিনরাত্রি কেবল গোরা! ওঁর বন্ধু গোরা হয়তো খুব মস্ত লোক, বেশ তো, ভালোই তো— কিন্তু উনিও তো মানুষ।”

 সুচরিতা হাসিয়া কহিল, “তা তো বটেই, কিন্তু তার ব্যাঘাত কি হয়েছে?”

 ললিতা। ওঁর বন্ধু ওঁকে এমনি ঢেকে ফেলেছেন যে উনি নিজেকে প্রকাশ করতে পারছেন না। যেন কাঁচপোকায় তেলাপোকাকে ধরেছে— ওরকম অবস্থায় কাঁচপোকার উপরেও আমার রাগ ধরে, তেলাপোকার উপরেও আমার শ্রদ্ধা হয় না।

 ললিতার কথার ঝাঁজ দেখিয়া সুচরিতা কিছু না বলিয়া হাসিতে লাগিল।

 ললিতা কহিল, “দিদি, তুমি হাসছ, কিন্ত আমি তোমাকে বলছি, আমাকে যদি কেউ ওরকম করে চাপা দিতে চেষ্টা করত আমি তাকে একদিনের জন্যেও সহ্য করতে পারতুম না। এই মনে করো, তুমি— লোকে যাই মনে করুক তুমি আমাকে আচ্ছন্ন করে রাখ নি— তোমার সেরকম প্রকৃতিই নয়— সেইজন্যেই আমি তোমাকে এতো ভালোবাসি। আসল, বাবার কাছে থেকে তোমার ঐ শিক্ষা হয়েছে— তিনি সব লোককেই তার জায়গাটুকু ছেড়ে দেন।”

১৪৭