পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৮৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 এ-সমস্ত কথা সুচরিতার পক্ষে খুব স্পষ্ট বুঝিবার কথা নহে— কিন্তু অনুভূতির প্রথম অস্পষ্ট সঞ্চারেরও বেগ অত্যন্ত প্রবল। জীবনটা যে নিতান্তই চারটে দেয়ালের মধ্যে বা একটা দলের মধ্যে বদ্ধ নহে, এই উপলব্ধিটা সুচরিতাকে যেন পীড়া দিতে লাগিল।

 এমন সময় সিঁড়ির কাছ হইতে মেয়েদের উচ্চহাস্যমিশ্রিত দ্রুত পদশব্দ শুনা গেল। বরদাসুন্দরী ও মেয়েদের লইয়া পরেশবাবু ফিরিয়াছেন। সুধীর সিঁড়ি দিয়া উঠিবার সময় মেয়েদের উপর কী একটা উৎপাত করিতেছে, তাহাই লইয়া এই হাস্যধ্বনির সৃষ্টি।

 লাবণ্য ললিতা ও সতীশ ঘরের মধ্যে ঢুকিয়াই গোরাকে দেখিয়া সংযত হইয়া দাঁড়াইল। লাবণ্য ঘর হইতে বাহির হইয়া গেল— সতীশ বিনয়ের চৌকির পাশে দাঁড়াইয়া কানে কানে তাহার সহিত বিশ্রম্ভালাপ শুরু করিয়া দিল। ললিতা সুচরিতার পশ্চাতে চৌকি টানিয়া তাহার আড়ালে অদৃশ্যপ্রায় হইয়া বসিল।

 পরেশ আসিয়া কহিলেন, “আমার ফিরতে বড়ো দেরি হয়ে গেল। পানুবাবু বুঝি চলে গেছেন?”

 সুচরিতা তাহার কোনো উত্তর দিল না; বিনয় কহিল, “হাঁ, তিনি থাকতে পারলেন না।”

 গোরা উঠিয়া কহিল, “আজ আমরাও আসি।”

 বলিয়া পরেশবাবুকে নত হইয়া নমস্কার করিল।

 পরেশবাবু কহিলেন, “আজ আর তোমাদের সঙ্গে আলাপ করবার সময় পেলুম না। বাবা, যখন তোমার অবকাশ হবে মাঝে মাঝে এসো।”

 গোরা ও বিনয় ঘর হইতে বাহির হইবার উপক্রম করিতেছে এমন সময় বরদাসুন্দরী আসিয়া পড়িলেন। উভয়ে তাঁহাকে নমস্কার করিল। তিনি কহিলেন, “আপনারা এখনই যাচ্ছেন নাকি?”

 গোরা কহিল, “হাঁ।”

 বরদাসুন্দরী বিনয়কে কহিলেন, “কিন্তু বিনয়বাবু, আপনি যেতে পারছেন

১৭৩