পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

কথায় কথায় আহত করিতে লাগিল।

 শেষকালে বিনয় কহিল, “দেখুন, আপনি তর্ক করছেন কেন? আপনি বলুন-না কেন, “আমার ইচ্ছা, আপনি অভিনয়ে যোগ দেন।' তা হলে আমি আপনার অনুরোধ-রক্ষার খাতিরে নিজের মতটাকে বিসর্জন দিয়ে একটা সুখ পাই।”

 ললিতা কহিল, “বাঃ, তা আমি কেন বলব? সত্যি যদি আপনার কোনো মত থাকে তা হলে সেটা আমার অনুরোধে কেন ত্যাগ করতে যাবেন? কিন্তু সেটা সত্যি হওয়া চাই।”

 বিনয় কহিল, “আচ্ছা, সেই কথাই ভালো। আমার সত্যিকার কোনো মত নেই। আপনার অনুরোধে নাই হল, আপনার তর্কেই পরাস্ত হয়ে আমি অভিনয়ে যোগ দিতে রাজি হলুম।”

 এমন সময় বরদাসুন্দরী ঘরে প্রবেশ করিবামাত্রই বিনয় উঠিয়া গিয়া তাঁহাকে কহিল, “অভিনয়ের জন্য প্রস্তুত হতে হলে আমাকে কী করতে হবে বলে দেবেন।”

 বরদাসুন্দরী সগর্বে কহিলেন, “সেজন্যে আপনাকে কিছুই ভাবতে হবে না, আমরা আপনাকে ঠিক তৈরি করে নিতে পারব। কেবল অভ্যাসের জন্য রোজ আপনাকে নিয়মিত আসতে হবে।”

 বিনয় কহিল, “আচ্ছা। আজ তবে আসি।”

 বরদাসুন্দরী কহিলেন, “সে কী কথা? আপনাকে খেয়ে যেতে হচ্ছে।”

 বিনয় কহিল, “আজ নাই খেলুম।”

 বরদাসুন্দরী কহিলেন, “না না, সে হবে না।”

 বিনয় খাইল, কিন্তু অন্য দিনের মতো তাহার স্বাভাবিক প্রফুল্লতা ছিল না। আজ সুচরিতাও কেমন অন্যমনস্ক হইয়া চুপ করিয়া ছিল। যখন ললিতার সঙ্গে বিনয়ের লড়াই চলিতেছিল তখন সে বারান্দায় পায়চারি করিয়া বেড়াইতেছিল। আজ রাত্রে কথাবার্তা আর জমিল না।

 বিদায়ের সময় বিনয় ললিতার গম্ভীর মুখ লক্ষ্য করিয়া কহিল, “আমি

১৮৫