পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

উপলক্ষমাত্র।

 সুচরিতা এ কয়দিন বিশেষ করিয়া উপাসনায় মন দিয়াছিল। সে যেন পূর্বের চেয়েও পরেশবাবুকে বেশি করিয়া আশ্রয় করিবার চেষ্টা করিতেছিল। একদিন পরেশবাবু তাঁহার ঘরে একলা বসিয়া পড়িতেছিলেন, এমন সময় সুচরিতা তাঁহার কাছে চুপ করিয়া আসিয়া বসিল।

 পরেশবাবু বই টেবিলের উপর রাখিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “কী রাধে?”

 সুচরিতা কহিল, “কিছু না।”

 বলিয়া তাঁহার টেবিলের উপরে যদিচ বই-কাগজ প্রভৃতি গোছানোই ছিল তবু সেগুলিকে নাড়িয়া-চাড়িয়া অন্যরকম করিয়া গুছাইতে লাগিল।

 একটু পরে বলিয়া উঠিল, “বাবা, আগে তুমি আমাকে যেরকম পড়াতে এখন সেইরকম করে পড়াও না কেন?”

 পরেশবাবু সস্নেহে একটুখানি হাসিয়া কহিলেন, “আমার ছাত্রী যে আমার ইস্কুল থেকে পাস করে বেরিয়ে গেছে। এখন তো তুমি নিজে পড়েই বুঝতে পার।”

 সুচরিতা কহিল, “না, আমি কিচ্ছু বুঝতে পারি নে, আমি আগের মতো তোমার কাছে পড়ব।”

 পরেশবাবু কহিলেন, “আচ্ছা বেশ, কাল থেকে পড়াব।”

 সুচরিতা আবার কিছুক্ষণ চুপ করিয়া থাকিয়া হঠাৎ বলিয়া উঠিল, “বাবা, সেদিন বিনয়বাবু জাতিভেদের কথা অনেক বললেন, তুমি আমাকে সে সম্বন্ধে কিছু বুঝিয়ে বল না কেন?”

 পরেশবাবু কহিলেন, “মা, তুমি তো জানই, তোমরা আপনি ভেবে বুঝতে চেষ্টা করবে, আমার বা আর-কারো মত কেবল অভ্যস্ত কথার মতো ব্যবহার করবে না, আমি বরাবর তোমাদের সঙ্গে সেইরকম করেই ব্যবহার করেছি। প্রশ্নটা ঠিকমত মনে জেগে ওঠবার পূর্বেই সে সম্বন্ধে কোনো উপদেশ দিতে যাওয়া আর ক্ষুধা পাবার পূর্বেই খাবার খেতে দেওয়া একই,

১৯৭