পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৮৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

আনন্দময়ীকে শুনাইতেছিল— পানের ডিবা হাতে লইয়া সেইখানে আসিয়া মহিম তক্তপোশের উপরে ধীরে ধীরে বসিলেন।

 প্রথমত বিনয়কে একটা পান দিয়া তিনি গোরার উচ্ছৃঙ্খল নির্‌বুদ্ধিতা লইয়া বিরক্তি প্রকাশ করিলেন। তাহার পরে তাহার খালাস হইতে আর কয়দিন বাকি তাহা আলোচনা করিতে গিয়া অত্যন্ত অকস্মাৎ মনে পড়িয়া গেল যে, অঘ্রান মাসের প্রায় অর্ধেক হইয়া আসিয়াছে।

 কহিলেন, “বিনয়, তুমি যে বলেছিলে অঘ্রান মাসে তোমাদের বংশে বিবাহ নিষেধ আছে, সেটা কোনো কাজের কথা নয়। একে তো পাঁজিপুঁথিতে নিষেধ ছাড়া কথাই নেই, তার উপরে যদি ঘরের শাস্ত্র বানাতে থাক তা হলে বংশরক্ষা হবে কী করে?”

 বিনয়ের সংকট দেখিয়া আনন্দময়ী কহিলেন, “শশিমুখীকে এতটুকুবেলা থেকে বিনয় দেখে আসছে— ওকে বিয়ে করার কথা ওর মনে লাগছে না; সেইজন্যেই অঘ্রান মাসের ছুতো করে বসে আছে।”

 মহিম কহিলেন, “সে কথা তো গোড়ায় বললেই হত।”

 আনন্দময়ী কহিলেন, “নিজের মন বুঝতেও যে সময় লাগে। পাত্রের অভাব কী আছে মহিম। গোরা ফিরে আসুক— সে তো অনেক ভালো ছেলেকে জানে— সে একটা ঠিক করে দিতে পারবে।”

 মহিম মুখ অন্ধকার করিয়া কহিলেন, “হুঁ।” খানিকক্ষণ চুপ করিয়া রহিলেন, তাহার পরে কহিলেন, “মা, তুমি যদি বিনয়ের মন ভাঙিয়ে না দিতে তা হলে ও এ কাজে আপত্তি করত না।”

 বিনয় ব্যস্ত হইয়া কী একটা বলিতে যাইতেছিল, আনন্দময়ী বাধা দিয়া কহিলেন, “তা, সত্য কথা বলছি মহিম, আমি ওকে উৎসাহ দিতে পারি নি। বিনয় ছেলেমানুষ, ও হয়তো না বুঝে একটা কাজ করে বসতেও পারত, কিন্তু শেষকালে ভালো হত না।”

 আনন্দময়ী বিনয়কে আড়ালে রাখিয়া নিজের 'পরেই মহিমের রাগের ধাক্কাটা গ্রহণ করিলেন। বিনয় তাহা বুঝিতে পারিয়া নিজের দুর্বলতায়

২৭৬