পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

হয় নাই এবং লোকের তাহা লক্ষ্য করিবার বিষয় হইয়াছে বটে।

 বিনয় নিজের ধুতির প্রান্ত হইতে একটা সুতা ছিঁড়িতে ছিঁড়িতে চুপ করিয়া রহিল।

 এমন সময় বেহারা আসিয়া খবর দিল, “মাজি, কাঁহাসে মায়ীলোক আয়া।”

 বিনয় তাড়াতাড়ি উঠিয়া দাঁড়াইল। কে আসিল, কোথা হইতে আসিল, খবর লইতে লইতেই সুচরিতা ও ললিতা ঘরের মধ্যে আসিয়া প্রবেশ করিল। বিনয়ের ঘর ছাড়িয়া বাহিরে যাওয়া ঘটিল না; সে স্তম্ভিত হইয়া দাঁড়াইয়া রহিল।

 দুজনে আনন্দময়ীর পায়ের ধুলা লইয়া প্রণাম করিল। ললিতা বিনয়কে বিশেষ লক্ষ্য করিল না; সুচরিতা তাহাকে নমস্কার করিয়া কহিল, “ভালো আছেন?”

 আনন্দময়ীর দিকে চাহিয়া সে কহিল, “আমরা পরেশবাবুর বাড়ি থেকে আসছি।”

 আনন্দময়ী তাহাদিগকে আদর করিয়া বসাইয়া কহিলেন, “আমাকে সে পরিচয় দিতে হবে না। তোমাদের দেখি নি, মা, কিন্তু তোমাদের আপনার ঘরের বলেই জানি।”

 দেখিতে দেখিতে কথা জমিয়া উঠিল। বিনয় চুপ করিয়া বসিয়া আছে দেখিয়া সুচরিতা তাহাকে আলাপের মধ্যে টানিয়া লইবার চেষ্টা করিল; মৃদুস্বরে জিজ্ঞাসা করিল, “আপনি অনেক দিন আমাদের ওখানে যান নি যে?”

 বিনয় ললিতার দিকে একবার দৃষ্টিনিক্ষেপ করিয়া লইয়া কহিল, “ঘন ঘন বিরক্ত করলে পাছে আপনাদের স্নেহ হারাই, মনে এই ভয় হয়।”

 সুচরিতা একটু হাসিয়া কহিল, “স্নেহও যে ঘন ঘন বিরক্তির অপেক্ষা রাখে, সে আপনি জানেন না বুঝি?”

 আনন্দময়ী কহিলেন, “তা ও খুব জানে মা! কী বলব তোমাদের—

২৭৮