পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পারিয়া লজ্জায় ভয়ে তাহার প্রাণ শুকাইয়া গেছে। বিনয়ের হৃদয় যে তাহার প্রতি বিমুখ নহে এ কথা সে বুঝিয়াছে; বুঝিয়াছে বলিয়াই নিজেকে সংবরণ করা তাহার পক্ষে আজ এত কঠিন হইয়াছে। সেইজন্যই সে যখন উতলা হইয়া বিনয়ের আশাপথ চাহিয়া থাকে সেইসঙ্গেই তাহার মনের ভিতরে একটা ভয় হইতে থাকে, পাছে বিনয় আসিয়া পড়ে। এমনি করিয়া নিজের সঙ্গে টানাটানি করিতে করিতে আজ সকালে তাহার ধৈর্য আর বাঁধ মানিল না। তাহার মনে হইল, বিনয় না আসাতেই তাহার প্রাণের ভিতরটা কেবলই অশান্ত হইয়া উঠিতেছে, একবার দেখা হইলেই এই অস্থিরতা দূর হইয়া যাইবে।

 সকালবেলা সে সতীশকে নিজের ঘরের মধ্যে টানিয়া আনিল। সতীশ আজকাল মাসিকে পাইয়া বিনয়ের সঙ্গে বন্ধুত্বচর্চার কথা একরকম ভুলিয়াই ছিল। ললিতা তাহাকে কহিল, “বিনয়বাবুর সঙ্গে তোর বুঝি ঝগড়া হয়ে গেছে?”

 সে এই অপবাদ সতেজে অস্বীকার করিল। ললিতা কহিল, “ভারি তো তোর বন্ধু! তুইই কেবল বিনয়বাবু বিনয়বাবু করিস, তিনি তো ফিরেও তাকান না।”

 সতীশ কহিল, “ইস! তাই তো! কখ্‌খনো না!"

 পরিবারের মধ্যে ক্ষুদ্রতম সতীশকে নিজের গৌরব সপ্রমাণ করিবার জন্য এমনি করিয়া বারংবার গলার জোর প্রয়োগ করিতে হয়। আজ প্রমাণকে তাহার চেয়েও দৃঢ়তর করিবার জন্য সে তখনই বিনয়ের বাসায় ছুটিয়া গেল। ফিরিয়া আসিয়া কহিল, “তিনি যে বাড়িতে নেই, তাই জন্যে আসতে পারেন নি।”

 ললিতা জিজ্ঞাসা করিল, “এ কদিন আসেন নি কেন?”

 সতীশ কহিল, “কদিনই যে ছিলেন না।”

 তখন ললিতা সুচরিতার কাছে গিয়া কহিল, “দিদিভাই, গৌরবাবুর মায়ের কাছে আমাদের কিন্তু একবার যাওয়া উচিত।”

২৮৩