পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

এই ম্লান সন্ধ্যার ধূরসতাও আজ বিনয়ের মনকে রাঙাইয়া তুলিয়াছে। তাহার মনে হইতে লাগিল, চারি দিক তাহাকে যেন নিবিড় করিয়া ঘিরিয়াছে, আকাশ তাহাকে যেন স্পর্শ করিতেছে।

 আনন্দময়ী কহিলেন, “মেয়ে দুটি বড়ো লক্ষ্ণী।”

 বিনয় এই কথাটকে থামিতে দিল না। নানা দিক দিয়া এই আলোচনাকে জাগ্রত করিয়া রাখিল। পরেশবাবুর মেয়েদের সম্বন্ধে কতদিনকার কত ছোটোখাটো ঘটনার কথা উঠিয়া পড়িল—তাহার অনেকগুলিই অকিঞ্চিৎকর, কিন্তু সেই অগ্রহায়ণের ম্লানায়মান নিভৃত সন্ধ্যায় নিরালা ঘরে বিনয়ের উৎসাহ এবং আনন্দময়ীর ঔৎসুক্য-দ্বারা এই-সকল ক্ষুদ্র গৃহকোণের অখ্যাত ইতিহাসখণ্ড একটি গম্ভীর মহিমায় পূর্ণ হইয়া উঠিল।

 আনন্দময়ী হঠাৎ এক সময়ে নিশ্বাস ফেলিয়া বলিয়া উঠিলেন, “সুচরিতার সঙ্গে যদি গোরার বিয়ে হতে পারে তো বড়ো খুশি হই।”

 বিনয় লাফাইয়া উঠিল, কহিল, “মা, এ কথা আমি অনেক বার ভেবেছি। ঠিক গোরার উপযুক্ত সঙ্গিনী।”

 আনন্দময়ী। কিন্তু হবে কী?

 বিনয়। কেন হবে না? আমার মনে হয় গোরা যে সুচরিতাকে পছন্দ করে না তা নয়।

 গোরা মন যে কোনো এক জায়গায় আকৃষ্ট হইয়াছে আনন্দময়ীর কাছে তাহা অগোচর ছিল না। সে মেয়েটি যে সুচরিতা তাহাও তিনি বিনয়ের নানা কথা হইতে সংগ্রহ করিয়াছিলেন। খানিকক্ষণ চুপ করিয়া থাকিয়া আনন্দময়ী কহিলেন, “কিন্তু সুচরিতা কি হিন্দুর ঘরে বিয়ে করবে?”

 বিনয় কহিল, “আচ্ছা মা, গোরা কি ব্রাহ্মর ঘরে বিয়ে করতে পারে না? তোমার কি তাতে মত নেই?”

 আনন্দময়ী। আমার খুব মত আছে।

 বিনয় পুনশ্চ জিজ্ঞাসা করিল, “আছে?”

 আনন্দময়ী কহিলেন, “আছে বৈকি বিনু! মানুষের সঙ্গে মানুষের মনের

২৮৭