পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

মনের মিল নিয়েই বিয়ে— সে সময়ে কোন্‌ মন্তরটা পড়া হল তা নিয়ে কী আসে যায় বাবা! যেমন করে হোক ভগবানের নামটা নিলেই হল।”

 বিনয়ের মনের ভিতর হইতে একটা ভার নামিয়া গেল। সে উৎসাহিত হইয়া কহিল, “মা, তোমার মুখে যখন এ-সব কথা শুনি আমার ভারি আশ্চর্য বোধ হয়। এমন ঔদার্য তুমি পেলে কোথা থেকে!"

 আনন্দময়ী হাসিয়া কহিলেন, “গোরার কাছ থেকে পেয়েছি।”

 বিনয় কহিল, “গোরা তো এর উল্‌টো কথাই বলে!"

 আনন্দময়ী। বললে কী হবে। আমার যা-কিছু শিক্ষা সব গোরা থেকেই হয়েছে। মানুষ বস্তুটি যে কত সত্য—আর মানুষ যা নিয়ে দলাদলি করে, ঝগড়া করে মরে, তা যে কত মিথ্যে—সে কথা ভগবান গোরাকে যেদিন দিয়েছেন সেইদিনই বুঝিয়ে দিয়েছেন। বাবা, ব্রাহ্মই বা কে আর হিন্দুই বা কে। মানুষের হৃদয়ের তো কোনো জাত নেই—সেইখানেই ভগবান সকলকে মেলান এবং নিজে এসেও মেলেন। তাঁকে ঠেলে দিয়ে মন্তর আর মতের উপরেই মেলাবার ভার দিলে চলে কি?”

 বিনয় আনন্দময়ীর পায়ের ধুলা লইয়া কহিল, “মা, তোমার কথা আমার বড়ো মিষ্টি লাগল। আমার দিনটা আজ সার্থক হয়েছে।”


৩৭

সুচরিতার মাসি হরিমোহিনীকে লইয়া পরেশের পরিবারে একটা গুরুতর অশান্তি উপস্থিত হইল। তাহা বিবৃত করিয়া বলিবার পূর্বে, হরিমোহিনী সুচরিতার কাছে নিজের যে পরিচয় দিয়াছিলেন তাহাই সংক্ষেপ করিয়া নীচে লেখা গেল—

 আমি তোমার মায়ের চেয়ে দুই বছরের বড়ো ছিলাম। বাপের বাড়িতে আমাদের দুইজনের আদরের সীমা ছিল না। কেননা, তখন আমাদের ঘরে

২৮৮