পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩০৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

প্রার্থনা শুনিলেন না। আমার বুক যে জুড়ায় না, আমার সমস্ত শরীর-মন যে কাঁদিতে থাকে। বাপ রে বাপ! মানুষের প্রাণ কী কঠিন।

 সেই আট বৎসর বয়সে শ্বশুরবাড়ি গিয়াছি, তাহার পরে একদিনের জন্যও বাপের বাড়ি আসিতে পাই নাই। তোমার মায়ের বিবাহে উপস্থিত থাকিবার জন্য অনেক চেষ্টা করিয়াছিলাম, কোনো ফল হয় নাই। তাহার পর বাবার চিঠিতে তোমাদের জন্মের সংবাদ পাইলাম, আমার বোনের মৃত্যুসংবাদও পাইয়াছি। মায়ের-কোল-ছাড়া তোদের যে আমার কোলে টানিব, ঈশ্বর এপর্যন্ত এমন সুযোগ ঘটান নাই।

 তীর্থে ঘুরিয়া যখন দেখিলাম মায়া এখনো মন ভরিয়া আছে, কোনো-একটা বুকের জিনিসকে পাইবার জন্য বুকের তৃষ্ণা এখনো মরে নাই—তখন তোদের খোঁজ করিতে লাগিলাম। শুনিয়াছিলাম তোদের বাপ ধর্ম ছাড়িয়া, সমাজ ছাড়িয়া বাহির হইয়া পড়িয়াছিলেন। তা কী করিব! তোদের মা যে আমার এক মায়ের পেটের বোন।

 কাশীতে এক ভদ্রলোকের কাছে তোমাদের খোঁজ পাইয়া এখানে আসিয়াছি। পরেশবাবু শুনিয়াছি ঠাকুর-দেবতা মানেন না, কিন্তু ঠাকুর যে উঁহার প্রতি প্রসন্ন সে উঁহার মুখ দেখিলেই বোঝা যায়। পূজা পাইলেই ঠাকুর ভোলেন না, সে আমি খুব জানি—পরেশবাবু কেমন করিয়া তাঁহাকে বশ করিলেন সেই খবর আমি লইব। যাই হোক বাছা, একলা থাকিবার সময় এখানো আমার হয় নাই—সে আমি পারি না—ঠাকুর যেদিন দয়া করেন করিবেন, কিন্তু তোমাদের কোলের কাছে না রাখিয়া আমি বাঁচিব না।


৩৮

পরেশ বরদাসুন্দরীর অনুপস্থিতিকালে হরিমোহিনীকে আশ্রয় দিয়াছিলেন। ছাতের উপরকার নিভৃত ঘরে তাঁহাকে স্থান দিয়া যাহাতে তাঁহার আচার রক্ষা করিয়া চলার কোনো বিঘ্ন না ঘটে তাহার সমস্ত বন্দোবস্ত করিয়া

২৯৮