পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

না এমনিভাবে টেবিলের উপরকার দোয়াতদানিতে কলমগুলা গুছাইয়া রাখিতে লাগিল। পরেশবাবু একবার করুণনেত্রে সুচরিতার মুখের দিকে চাহিয়া হারানবাবুকে কহিলেন, “পানুবাবু, আমরা যা-কিছু খাই সবই তো ঠাকুরের প্রসাদ।”

 হারানবাবু কহিলেন, “কিন্তু সুচরিতা যে আমাদের ঠাকুরকে পরিত্যাগ করবার উদ্যোগ করছেন।”

 পরেশবাবু কহিলেন, “তাও যদি সম্ভব হয় তবে তা নিয়ে উৎপাত করলে কি তার কোনো প্রতিকার হবে?”

 হারানবাবু কহিলেন, “স্রোতে যে লোক ভেসে যাচ্ছে তাকে কি ডাঙায় তোলবার চেষ্টাও করতে হবে না?

 পরেশবাবু কহিলেন, “সকলে মিলে তার মাথার উপর ঢেলা ছুঁড়ে মারাকেই ডাঙায় তোলবার চেষ্টা বলা যায় না। পানুবাবু, আপনি নিশ্চিত থাকুন, আমি এতটুকুবেলা থেকেই সুচরিতাকে দেখে আসছি। ও যদি জলেই পড়ত তা হলে আমি আপনাদের সকলের আগেই জানতে পারতুম এবং আমি উদাসীন থাকতুম না।”

 হারানবাবু কহিলেন, “সুচরিতা তো এখানেই রয়েছেন। আপনি ওঁকেই জিজ্ঞাসা করুন-না। শুনতে পাই উনি সকলের ছোঁওয়া খান না। সে কথা কি মিথ্যা?”

 সুচরিতা দোয়াতদানের প্রতি অনাবশ্যক মনোযোগ দূর করিয়া কহিল, “বাবা জানেন আমি সকলের ছোঁওয়া খাই নে। উনি যদি আমার এই আচরণ সহ্য করে থাকেন তা হলেই হল। আপনাদের যদি ভালো না লাগে আপনারা যত খুশি আমার নিন্দা করুন, কিন্তু বাবাকে বিরক্ত করছেন কেন? উনি আপনাদের কত ক্ষমা করে চলেন তা আপনারা জানেন? এ কি তারই প্রতিফল?”

 হারানবাবু আশ্চর্য হইয়া ভাবিতে লাগিলেন, সুচরিতাও আজকাল কথা কহিতে শিখিয়াছে!

৩০৬