পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

আরম্ভ করেছে। তার বিবাহের যদি দেরি থাকে তা হলে মেয়েদের নিয়ে আমি অন্য কোথাও যাব— সুচরিতার অদ্ভুত দৃষ্টান্ত মেয়েদের পক্ষে বড়োই অনিষ্টের কারণ হচ্ছে। দেখো এর জন্যে পরে তোমাকে অনুতাপ করতে হবেই। ললিতা আগে তো এরকম ছিল না; এখন ও যে আপন ইচ্ছামত যা খুশি একটা কাণ্ড করে বসে, কাকেও মানে না, তার মূলে কে? সেদিন যে ব্যাপারটা বাধিয়ে বসল, যার জন্যে আমি লজ্জায় মরে যাচ্ছি, তুমি কি মনে কর তার মধ্যে সুচরিতার কোনো হাত ছিল না? তুমি নিজের মেয়ের চেয়ে সুচরিতাকে বরাবর বেশি ভালোবাস তাতে আমি কোনোদিন কোনো কথা বলি নি, কিন্তু আর চলে না, সে আমি স্পষ্টই বলে রাখছি।”

 সুচরিতার জন্য নহে, কিন্তু পারিবারিক অশান্তির জন্য পরেশবাবু চিন্তিত হইয়া পড়িয়াছিলেন। বরদাসুন্দরী যে উপলক্ষটি পাইয়া বসিয়াছেন ইহা লইয়া তিনি যে হুলস্থূল কাণ্ড বাধাইয়া বসিবেন এবং যতই দেখিবেন, আন্দোলনে কোনো ফল হইতেছে না ততই দুর্বার হইয়া উঠিতে থাকিবেন, ইহাতে তাঁহার কোনো সন্দেহ ছিল না। যদি সুচরিতার বিবাহ সত্বর সম্ভবপর হয় তবে বর্তমান অবস্থায় সুচরিতার পক্ষেও তাহা শান্তিজনক হইতে পারে তাহাতে সন্দেহ নাই। তিনি বরদাসুন্দরীকে বলিলেন, “পানুবাবু যদি সুচরিতাকে সম্মত করতে পারেন তা হলে আমি বিবাহ সম্বন্ধে কোনো আপত্তি করব না।”

 বরদাসুন্দরী কহিলেন, “আবার কতবার করে সম্মত করতে হবে? তুমি তো অবাক করলে! এত সাধাসাধিই বা কেন? পানুবাবুর মতো পাত্র উনি পাবেন কোথায় তাই জিজ্ঞাসা করি। তুমি রাগ কর আর যাই কর সত্যি কথা বলতে কি, সুচরিতা পানুবাবুর যোগ্য মেয়ে নয়।”

 পরেশবাবু কহিলেন, “পানুবাবুর প্রতি সুচরিতার মনের ভাব যে কী তা আমি স্পষ্ট করে বুঝতে পারি নি। অতএব তারা নিজেদের মধ্যে যতক্ষণ কথাটা পরিষ্কার করে না নেবে ততক্ষণ আমি এ বিষয়ে কোনোপ্রকার হস্তক্ষেপ করতে পারব না।”

৩০৯