পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 বরদাসুন্দরী কহিলেন, “বুঝতে পার নি! এত দিন পরে স্বীকার করলে! ঐ মেয়েটিকে বোঝা বড়ো সহজ নয়। ও বাইরে একরকম— ভিতরে একরকম!"

 বরদাসুন্দরী হারানবাবুকে ডাকিয়া পাঠাইলেন।

 সেদিন কাগজে ব্রাহ্মসমাজের বর্তমান দুর্গতির আলোচনা ছিল। তাহার মধ্যে পরেশবাবুর পরিবারের প্রতি এমনভাবে লক্ষ করা ছিল যে, কোনো নাম না থাকা সত্ত্বেও আক্রমণের বিষয় যে কে তাহা সকলের কাছেই বেশ স্পষ্ট হইয়াছিল; এবং লেখক যে কে তাহাও লেখার ভঙ্গিতে অনুমান করা কঠিন হয় নাই। কাগজখানায় কোনোমতে চোখ বুলাইয়াই সুচরিতা তাহা কুটিকুটি করিয়া ছিঁড়িতেছিল। ছিঁড়িতে ছিঁড়িতে কাগজের অংশগুলিকে যেন পরমাণুতে পরিণত করিবার জন্য তাহার রোখ চড়িয়া যাইতেছিল।

 এমন সময় হারানবাবু ঘরে প্রবেশ করিয়া সুচরিতার পাশে একটা চৌকি টানিয়া বসিলেন। সুচরিতা একবার মুখ তুলিয়াও চাহিল না, সে যেমন কাগজ ছিঁড়িতেছিল তেমনি ছিঁড়িতেই লাগিল।

 হারানবাবু কহিলেন, “সুচরিতা, আজ একটা গুরুতর কথা আছে। আমার কথায় একটু মন দিতে হবে।”

 সুচরিতা কাগজ ছিঁড়িতেই লাগিল। নখে ছেঁড়া যখন অসম্ভব হইল তখন থলে হইতে কাঁচি বাহির করিয়া কাঁচিটা দিয়া কাটিতে লাগিল। ঠিক এই মুহূর্তে ললিতা ঘরে প্রবেশ করিল।

 হারানবাবু কহিলেন, “ললিতা, সুচরিতার সঙ্গে আমার একটু কথা আছে।”

 ললিতা ঘর হইতে চলিয়া যাইবার উপক্রম করিতেই সুচরিতা তাহার আঁচল চাপিয়া ধরিল। ললিতা কহিল, “তোমার সঙ্গে পানুবাবুর যে কথা আছে!"

 সুচরিতা তাহার কোনো উত্তর না করিয়া ললিতার আঁচল চাপিয়াই রহিল— তখন ললিতা সুচরিতার আসনের এক পাশে বসিয়া পড়িল।

৩১০