পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 হারানবাবু কোনো বাধাতেই দমিবার পাত্র নহেন। তিনি আর ভূমিকামাত্র না করিয়া একেবারে কথাটা পাড়িয়া বসিলেন। কহিলেন, “আমাদের বিবাহে আর বিলম্ব হওয়া উচিত মনে করি নে। পরেশবাবুকে জানিয়েছিলাম; তিনি বললেন, তোমার সম্মতি পেলেই আর কোনো বাধা থাকবে না। আমি স্থির করেছি, আগামী রবিবারের পরের রবিবারেই"—

 সুচরিতা কথা শেষ করিতে না দিয়াই কহিল, “না।”

 সুচরিতার মুখে এই অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত সুস্পষ্ট এবং উদ্ধত “না” শুনিয়া হারানবাবু থমকিয়া গেলেন। সুচরিতাকে তিনি অত্যন্ত বাধ্য বলিয়া জানিতেন। সে যে একমাত্র “না” বাণের দ্বারা তাঁহার প্রস্তাবটিকে এক মুহূর্তে অর্ধপথে ছেদন করিয়া ফেলিবে, ইহা তিনিও মনে করেন নাই। তিনি বিরক্ত হইয়া কহিলেন, “না! না মানে কী? তুমি আরো দেরি করতে চাও?”

 সুচরিতা কহিল, “না।”

 হারানবাবু বিস্মিত হইয়া কহিলেন, “তবে?”

 সুচরিতা মাথা নত করিয়া কহিল, “বিবাহে আমার মত নেই।”

 হারানবাবু হতবুদ্ধির ন্যায় জিজ্ঞাসা করিলেন, “মত নেই? তার মানে?”

 ললিতা ঠোকর দিয়া কহিল, “পানুবাবু, আপনি আজ বাংলা ভাষা ভুলে গেলেন নাকি?”

 হারানবাবু কঠোর দৃষ্টির দ্বারা ললিতাকে আঘাত করিয়া কহিলেন, “বরঞ্চ মাতৃভাষা ভুলে গেছি এ কথা স্বীকার করা সহজ, কিন্তু যে মানুষের কথায় বরাবর শ্রদ্ধা করে এসেছি তাকে ভুল বুঝেছি এ কথা স্বীকার করা সহজ নয়।”

 ললিতা কহিল, “মানুষকে বুঝতে সময় লাগে, আপনার সম্বন্ধেও হয়তো সে কথা খাটে।”

 হারানবাবু কহিলেন, “প্রথম থেকে আজ পর্যন্ত আমার কথার বা মতের বা ব্যবহারের কোনো ব্যত্যয় ঘটে নি— আমি আমাকে ভুল বোঝবার

৩১১