পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ছিল, এখন আমার মত নেই এই কি যথেষ্ট নয়?”

 হারানবাবু কহিলেন, “ব্রাহ্মসমাজের কাছে যে আমাদের জবাবদিহি আছে। সমাজের লোকের কাছে তুমিই বা কী বলবে আমিই বা কী বলব?”

 সুচরিতা কহিল, “আমি কোনো কথাই বলব না। আপনি যদি বলতে ইচ্ছা করেন তবে বলবেন, সুচরিতার বয়স অল্প, ওর বুদ্ধি নেই, ওর মতি অস্থির। যেমন ইচ্ছা তেমনি বলবেন। কিন্তু এ সম্বন্ধে এই আমাদের শেষ কথা হয়ে গেল।”

 হারানবাবু কহিলেন, “শেষ কথা হতেই পারে না। পরেশবাবু যদি—"

 বলিতে বলিতেই পরেশবাবু আসিয়া উপস্থিত হইলেন; কহিলেন, “কী পানুবাবু, আমার কথা কী বলছেন?”

 সুচরিতা তখন ঘর হইতে বাহির হইয়া যাইতেছিল। হারানবাবু ডাকিয়া কহিলেন, “সুচরিতা, যেয়ো না, পরেশবাবুর কাছে কথাটা হয়ে যাক।”

 সুচরিতা ফিরিয়া দাঁড়াইল। হারানবাবু কহিলেন, “পরেশবাবু, এতদিন পরে আজ সুচরিতা বলছেন বিবাহে ওঁর মত নেই! এত বড়ো গুরুতর বিষয় নিয়ে কি এতদিন ওঁর খেলা করা উচিত ছিল? এই-যে কদর্য উপসর্গটা ঘটল এজন্য কি আপনাকেও দায়ী হতে হবে না?”

 পরেশবাবু সুচরিতার মাথায় হাত বুলাইয়া স্নিগ্ধস্বরে কহিলেন, “মা, তোমার এখানে থাকবার দরকার নেই, তুমি যাও।”

 এই সামান্য কথাটুকু শুনিবামাত্র এক মুহূর্তে অশ্রুজলে সুচরিতার দুই চোখ ভাসিয়া গেল এবং সে তাড়াতাড়ি সেখান হইতে চলিয়া গেল।

 পরেশবাবু কহিলেন, “সুচরিতা যে নিজের মন ভালো করে না বুঝেই বিবাহে সম্মতি দিয়েছিল এই সন্দেহ অনেক দিন থেকে আমার মনে উদয় হওয়াতেই, সমাজের লোকের সামনে আপনাদের সম্বন্ধ পাকা করার বিষয়ে আমি আপনার অনুরোধ পালন করতে পারি নি।”

 হারানবাবু কহিলেন, “সুচরিতা তখন নিজের মন ঠিক বুঝেই সম্মতি দিয়েছিল, এখনই না বুঝে অসম্মতি দিচ্ছে— এরকম সন্দেহ আপনার মনে

৩২০