পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

উদয় হচ্ছে না?”

 পরেশবাবু কহিলেন, “দুটোই হতে পারে, কিন্তু এরকম সন্দেহের স্থলে তো বিবাহ হতে পারে না।”

 হারানবাবু কহিলেন, “আপনি সুচরিতাকে সৎপরামর্শ দেবেন না?”

 পরেশবাবু কহিলেন, “আপনি নিশ্চয় জানেন, সুচরিতাকে আমি কখনো সাধ্যমত অসৎপরামর্শ দিতে পারি নে।”

 হারানবাবু কহিলেন, “তাই যদি হত, তা হলে সুচরিতার এরকম পরিণাম কখনোই ঘটতে পারত না। আপনার পরিবারে আজকাল যে-সব ব্যাপার আরম্ভ হয়েছে এ যে সমস্তই আপনার অবিবেচনার ফল, এ কথা আমি আপনাকে মুখের সামনেই বলছি।”

 পরেশবাবু ঈষৎ হাসিয়া কহিলেন, “এ তো আপনি ঠিক কথাই বলছেন— আমার পরিবারের সমস্ত ফলাফলের দায়িত্ব আমি নেব না তো কে নেবে?”

 হারানবাবু কহিলেন, “এজন্যে আপনাকে অনুতাপ করতে হবে— সে আমি বলে রাখছি।”

 পরেশবাবু কহিলেন, “অনুতাপ তো ঈশ্বরের দয়া। অপরাধকেই ভয় করি, পানুবাবু, অনুতাপকে নয়।”

 সুচরিতা ঘরে প্রবেশ করিয়া পরেশবাবুর হাত ধরিয়া কহিল, “বাবা, তোমার উপাসনার সময় হয়েছে।”

 পরেশবাবু কহিলেন, “পানুবাবু, তবে কি একটু বসবেন?”

 হারানবাবু কহিলেন, “না।”

 বলিয়া দ্রুতপদে চলিয়া গেলেন।


৪১

একই সময়ে নিজের অন্তরের সঙ্গে, আবার নিজের বাহিরের সঙ্গে সুচরিতার যে সংগ্রাম বাধিয়া উঠিয়াছে তাহাতে তাহাকে ভীত করিয়া তুলিয়াছে। গোরার প্রতি তাহার যে মনের ভাব এতদিন তাহার অলক্ষ্যে বল পাইয়া

২১
৩২১