পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 পরেশবাবু কহিলেন, “আমি জানতুম যে তিনি যাবেন। তোমরা দুজনেই তাঁর একমাত্র আত্মীয়— তোমরা তাঁকে এমন অনাথার মতো বিদায় দিতে পারবে না সেও আমি জানি। তাই আমি এ কয়দিন এ সম্বন্ধে ভাবছিলুম।”

 তাহার মাসি কী সংকটে পড়িয়াছেন পরেশবাবু যে তাহা বুঝিয়াছেন ও তাহা লইয়া ভাবিতেছেন এ কথা সুচরিতা একেবারেই অনুমান করে নাই। পাছে তিনি জানিতে পারিয়া বেদনা বোধ করেন এই ভয়ে সে এতদিন অত্যন্ত সাবধানে চলিতেছিল— আজ পরেশবাবুর কথা শুনিয়া সে আশ্চর্য হইয়া গেল এবং তাহার চোখের পাতা ছল্‌ছল্‌ করিয়া আসিল।

 পরেশবাবু কহিলেন, “তোমার মাসির জন্যে আমি একটি বাড়ি ঠিক করে রেখেছি।”

 সুচরিতা কহিল, “কিন্তু, তিনি তো—"

 পরেশবাবু। ভাড়া দিতে পারবেন না। ভাড়া তিনি কেন দেবেন? তুমি ভাড়া দেবে।

 সুচরিতা অবাক হইয়া পরেশবাবুর মুখের দিকে চাহিয়া রহিল। পরেশবাবু হাসিয়া কহিলেন, “তোমারই বাড়িতে থাকতে দিয়ো, ভাড়া দিতে হবে না।”

 সুচরিতা আরো বিস্মিত হইল। পরেশবাবু কহিলেন, “কলকাতায় তোমাদের দুটো বাড়ি আছে জান না! একটি তোমার, একটি সতীশের। মৃত্যুর সময়ে তোমার বাবা আমার হাতে কিছু টাকা দিয়ে যান। আমি তাই খাটিয়ে বাড়িয়ে তুলে কলকাতায় দুটো বাড়ি কিনেছি। এতদিন তার ভাড়া পাচ্ছিলুম, তাও জমছিল। তোমার বাড়ির ভাড়াটে অল্পদিন হল উঠেও গেছে— সেখানে তোমার মাসির থাকবার কোনো অসুবিধা হবে না।”

 সুচরিতা কহিল, “সেখানে তিনি কি একলা থাকতে পারবেন?”

 পরেশবাবু কহিলেন, “তোমরা তাঁর আপনার লোক থাকতে তাঁকে একলা থাকতে হবে কেন?”

 সুচরিতা কহিল, “সেই কথাই তোমাকে বলবার জন্যে আজ এসেছিলুম।

৩৩০