পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৫

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

জানিস? ছোটো ছেলেকে বুকে তুলে নিলেই বুঝতে পারা যায় যে, জাত নিয়ে কেউ পৃথিবীতে জন্মায় না। সে কথা যেদিন বুঝেছি সেদিন থেকে এ কথা নিশ্চয় জেনেছি যে, আমি যদি খৃস্টান ব'লে, ছোটো জাত ব'লে কাউকে ঘৃণা করি তবে ঈশ্বর তোকেও আমার কাছ থেকে কেড়ে নেবেন। তুই আমার কোল ভরে আমার ঘর আলো করে থাক, আমি পৃথিবীর সকল জাতের হাতেই জল খাব।

 আজ আনন্দময়ীর কথা শুনিয়া বিনয়ের মনে হঠাৎ কী একটা অস্পষ্ট সংশয়ের আভাস দেখা দিল। সে একবার আনন্দময়ীর ও একবার গোরার মুখের দিকে তাকাইল, কিন্তু তখনই মন হইতে সকল তর্কের উপক্রম দূর করিয়া দিল।

 গোরা কহিল, “মা, তোমার যুক্তিটা ভালো বোঝা গেল না। যারা বিচার করে শাস্ত্র মেনে চলে তাদের ঘরেও তো ছেলে বেঁচে থাকে, আর ঈশ্বর তোমার সম্বন্ধেই বিশেষ আইন খাটাবেন এ বুদ্ধি তোমাকে কে দিলে।”

 আনন্দময়ী। যিনি তোকে দিয়েছেন বুদ্ধিও তিনি দিয়েছেন। তা, আমি কী করব বল! আমার এতে কোনো হাত নেই। কিন্তু, ওরে পাগল, তোর পাগলামি দেখে আমি হাসব কি কাঁদব তা ভেবে পাই নে। যাক, সে-সব কথা যাক। তবে বিনয় আমার ঘরে খাবে না?

 গোরা। ও তো এখনই সুযোগ পেলেই ছোটে, লোভটি ওর যোলো আনা। কিন্তু মা, আমি যেতে দেব না। ও যে বামুনের ছেলে, দুটো মিষ্টি দিয়ে সে কথা ওকে ভোলালে চলবে না। ওকে অনেক ত্যাগ করতে হবে, প্রবৃত্তি সামলাতে হবে, তবে ও জন্মের গৌরব রাখতে পারবে। মা, তুমি কিন্তু রাগ কোরো না। আমি তোমার পায়ের ধুলো নিচ্ছি।

 আনন্দময়ী। আমি রাগ করব! তুই বলিস কী। তুই যা করছিস এ তুই জ্ঞানে করছিস নে, তা আমি তোকে বলে দিলুম। আমার মনে এই কষ্ট রইল যে, তোকে মানুষ করলুম বটে কিন্তু- যাই হোক গে, তুই যাকে ধর্ম বলে বেড়াস সে আমার মানা চলবে না- নাহয়, তুই আমার ঘরে আমার

২৫