পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

তাহার প্রতিবেশীদের দৈনিক জীবনযাত্রার প্রধান ও অপ্রধান অনেক বিষয়ই দূর হইতে বায়ুযোগে তাহার নিকট আলোচিত হইত। চিরুনি হস্তে কেশসংস্কার করিতে করিতে মুক্ত আকাশতলে প্রায়ই তাহার অপরাহ্ন সভা জমিত।

 ললিতা তাহার সংকল্পিত মেয়ে-ইস্কুলের ছাত্রীসংগ্রহের ভার লাবণ্যের উপর অর্পণ করিল। লাবণ্য ছাতে ছাতে যখন এই প্রস্তাব ঘোষণা করিয়া দিল তখন অনেক মেয়েই উৎসাহিত হইয়া উঠিল। ললিতা খুশি হইয়া সুচরিতার বাড়ির একতলার ঘর ঝাঁট দিয়া, ধুইয়া, সাজাইয়া প্রস্তুত করিতে লাগিল।

 কিন্তু, তাহার ইস্কুলঘর শূন্যই রহিয়া গেল। বাড়ির কর্তারা তাঁহাদের মেয়েদের ভুলাইয়া পড়াইবার ছলে ব্রাহ্মবাড়িতে লইয়া যাইবার প্রস্তাবে অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হইয়া উঠিলেন। এমন-কি, এই উপলক্ষেই যখন তাঁহারা জানিতে পারিলেন, পরেশবাবুর মেয়েদের সঙ্গে তাহাদের মেয়েদের আলাপ চলে, তখন তাহাতে বাধা দেওয়াই তাঁহারা কর্তব্য বোধ করিলেন। তাঁহাদের মেয়েদের ছাতে ওঠা বন্ধ হইবার জো হইল এবং ব্রাহ্ম প্রতিবেশীর মেয়েদের সাধু সংকল্পের প্রতি তাঁহারা সাধুভাষা প্রয়োগ করিলেন না। বেচারা লাবণ্য যথাসময়ে চিরুনি হাতে ছাতে উঠিয়া দেখে, পার্শ্ববর্তী ছাতগুলিতে নবীনাদের পরিবর্তে প্রবীণদের সমাগম হইতেছে এবং তাহাদের একজনের নিকট হইতেও সে সাদর সম্ভাষণ লাভ করিল না।

 ললিতা ইহাতেও ক্ষান্ত হইল না। সে কহিল, অনেক গরিব ব্রাহ্ম মেয়ের বেথুন ইস্কুলে গিয়া পড়া দুঃসাধ্য, তাহাদের পড়াইবার ভার সইলে উপকার হইতে পারিবে।

 এইরূপ ছাত্রী-সন্ধানে সে নিজেও লাগিল, সুধীরকেও লাগাইয়া দিল।

 সেকালে পরেশবাবুর মেয়েদের পড়াশুনার খ্যাতি বহুদূরবিস্তৃত ছিল। এমন-কি, সে খ্যাতি সত্যকেও অনেক দূর ছাড়াইয়া গিয়াছিল। এজন্য ইহারা মেয়েদের বিনা বেতনে পড়াইবার ভার লইবেন’শুনিয়া অনেক পিতামাতাই খুশি হইয়া উঠিলেন।

৩৫০