পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

হইতেছে। বিনয়ের প্রতি ললিতার মনের ভাব সম্বন্ধে যদি তাঁহার মনে সন্দেহ উপস্থিত না হইত তবে তিনি বাহিরের কথায় কিছুমাত্র কান দিতেন না। কিন্তু যদি বিনয়ের প্রতি ললিতার অনুরাগ জন্মিয়া থাকে তবে সে স্থলে তাঁহার কর্তব্য কী সে প্রশ্ন তিনি বারবার নিজেকে জিজ্ঞাসা করিয়াছেন। প্রকাশ্যভাবে ব্রাহ্মধর্মে দীক্ষা লওয়ার পর তাঁহার পরিবারে আবার এই একটা সংকটের সময় উপস্থিত হইয়াছে। সেইজন্য এক দিকে একটা ভয় এবং কষ্ট তাঁহাকে ভিতরে ভিতরে পীড়ন করিতেছে, অন্য দিকে তাঁহার সমস্ত চিত্তশক্তি জাগ্রত হইয়া উঠিয়া বলিতেছে, “ব্রাহ্মধর্ম গ্রহণের সময় যেমন একমাত্র ঈশ্বরের দিকে দৃষ্টি রাখিয়াই কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণও হইয়াছি, সত্যকেই সুখ সম্পত্তি সমাজ সকলের ঊর্ধ্বে স্বীকার করিয়া জীবন চিরদিনের মতো ধন্য হইয়াছে, এখনো যদি সেইরূপ পরীক্ষার দিন উপস্থিত হয় তবে তাঁহার দিকেই লক্ষ রাখিয়া উত্তীর্ণ হইব।'

 ললিতার প্রশ্নের উত্তরে পরেশবাবু কহিলেন, “বিনয়কে আমি তো খুব ভালো বলেই জানি। তাঁর বিদ্যাবুদ্ধিও যেমন চরিত্রও তেমনি।”

 একটুখানি চুপ করিয়া থাকিয়া ললিতা কহিল, “গৌরবাবুর মা এর মধ্যে দুদিন আমাদের বাড়ি এসেছিলেন। সুচিদিদিকে নিয়ে তাঁর ওখানে আজ একবার যাব?”

 পরেশবাবু ক্ষণকালের জন্য উত্তর দিতে পারিলেন না। তিনি নিশ্চয় জানিতেন বর্তমান আলোচনার সময় এইরূপ যাতায়াতে তাঁহাদের নিন্দা আরো প্রশ্রয় পাইবে। কিন্তু তাঁহার মন বলিয়া উঠিল, “যতক্ষণ ইহা অন্যায় নহে ততক্ষণ আমি নিষেধ করিতে পারিব না।' কহিলেন, “আচ্ছা, যাও। আমার কাজ আছে, নইলে আমিও তোমাদের সঙ্গে যেতুম।”

৩৫৬