তোকে বলছি তোর কিছু সংকোচ করতে হবে না।”
বিনয় কহিল, “কিন্তু মা, গোরার কথাও তো ভাবতে হয়।”
আনন্দময়ী দৃঢ়স্বরে কহিলেন, “না বাছা, এর মধ্যে গোরার কথা ভাববার কথাই নয়। আমি জানি সে রাগ করবে— আমি চাই নে যে সে তোর উপরে রাগ করে। কিন্তু কী করবি, ললিতার প্রতি যদি তোর শ্রদ্ধা থাকে তবে তার সম্বন্ধে চিরকাল সমাজে একটা অপমান থেকে যাবে এ তো তুই ঘটতে দিতে পারিস নে।”
কিন্তু এ যে বড়ো শক্ত কথা। কারাদণ্ডে দণ্ডিত যে গোরার প্রতি বিনয়ের প্রেম আরো যেন দ্বিগুণ বেগে ধাবিত হইতেছে তাহার জন্য সে এত বড়ো একটা আঘাত প্রস্তুত করিয়া রাখিতে পারে কি? তা ছাড়া সংস্কার। সমাজকে বুদ্ধিতে লঙ্ঘন করা সহজ— কিন্তু কাজে লঙ্ঘন করিবার বেলায় ছোটোবড়ো কত জায়গায় টান পড়ে। একটা অপরিচিতের আতঙ্ক, একটা অনভ্যস্তের প্রত্যাখ্যান বিনা যুক্তিতে কেবলই পিছনের দিকে ঠেলিতে থাকে।
বিনয় কহিল, “মা, তোমাকে যতই দেখছি আশ্চর্য হয়ে যাচ্ছি। তোমার মন একেবারে এমন সাফ হল কী করে! তোমাকে কি পায়ে চলতে হয় না— ঈশ্বর তোমাকে কি পাখা দি|য়ছেন? তোমার কোনো জায়গায় কিছু ঠেকে না?”
আনন্দময়ী হাসিয়া কহিলেন, “ঈশ্বর আমার ঠেকবার মতো কিছুই রাখেন নি। সমস্ত একেবারে পরিষ্কার করে দিয়েছেন।”
বিনয় কহিল, “কিন্তু, মা, আমি মুখে যাই বলি মনটাতে ঠেকে যে। এত যে বুঝিসুঝি, পড়ি শুনি, তর্ক করি, হঠাৎ দেখতে পাই মনটা নিতান্ত মূর্খই রয়ে গেছে।”
এমন সময় মহিম ঘরে ঢুকিয়াই বিনয়কে ললিতা সম্বন্ধে এমন নিতান্ত রূঢ় রকম করিয়া প্রশ্ন করিলেন যে, তাহার হৃদয় সংকোচে পীড়িত হইয়া উঠিল। সে আত্মদমন করিয়া মুখ নিচু করিয়া নিরুত্তরে বসিয়া রহিল। তখন মহিম