পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ঘরের মেয়ে বিয়ে করবেন?”

 আনন্দময়ী কহিলেন, “সে যদি করতে রাজি হয় তাতে তোমাদের আপত্তি কী?”

 সুচরিতার অত্যন্ত গোল ঠেকিল; সে কহিল, “সে কেমন করে সম্ভব হবে আমি তো বুঝতে পারছি নে।”

 আনন্দময়ী কহিলেন, “আমার কাছে এ তো খুবই সহজ ঠেকছে মা! দেখো আমার বাড়িতে যে নিয়ম চলে সে নিয়মে আমি চলতে পারি নে— সেইজন্য আমাকে কত লোকে খৃস্টান বলে। কোনো ক্রিয়াকর্মের সময়ে আমি ইচ্ছা করেই তফাত হয়ে থাকি। তুমি শুনে হাসবে মা, গোরা আমার ঘরে জল খায় না। কিন্তু তাই বলে আমি কেন বলতে যাব, এ ঘর আমার ঘর নয়, এ সমাজ আমার সমাজ নয়। আমি তো বলতে পারি নে। সমস্ত গালমন্দ মাথায় করে নিয়েই আমি এই ঘর এই সমাজ নিয়ে আছি। তাতে তো আমার এমন কিছু বাধছে না। যদি এমন বাধে যে আর চলে না তবে ঈশ্বর যে পথ দেখাবেন সেই পথ ধরব। কিন্তু শেষ পর্যন্তই যা আমার তাকে আমারই বলব— তারা যদি আমাকে স্বীকার না করে তবে সে তারা বুঝুক।”

 সুচরিতার কাছে এখনো পরিষ্কার হইল না; সে কহিল, “কিন্তু, দেখুন, ব্রাহ্ম-সমাজের যা মত বিনয়বাবুর যদি—"

 আনন্দময়ী কহিলেন, “তার মতও তো সেইরকমই। ব্রাহ্মসমাজের মত তো একটা সৃষ্টিছাড়া মত নয়। তোমাদের কাগজে যে-সব উপদেশ বেরোয়, ও তো আমাকে প্রায়ই সেগুলি পড়ে শোনায়— কোন্‌খানে তফাত বুঝতে তো পারি নে।”

 এমন সময় “সুচিদিদি” বলিয়া ঘরে প্রবেশ করিয়াই আনন্দময়ীকে দেখিয়া ললিতা লজ্জায় লাল হইয়া উঠিল। সে সুচরিতার মুখ দেখিয়াই বুঝিল এতক্ষণ তাহারই কথা হইতেছিল। ঘর হইতে পালাইতে পারিলেই সে যেন রক্ষা পাইত, কিন্তু তখন আর পালাইবার উপায় ছিল না।

৩৮৮