পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪০৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পুনর্জন্ম লাভ করিল। সেই রাজপথে খোলা আকাশের নীচে প্রভাতের আলোকে পরেশের শান্ত স্নেহপূর্ণ স্বভাবসৌম্য মুখ দেখিয়া সে যেমন ভক্তির আনন্দে তাঁহার পায়ের ধুলা লইল এমন আর কোনোদিন করে নাই। পরেশ তাহার সঙ্গে কোলাকুলি করিলেন।

 বিনয়ের হাত ধরিয়া গোরা হাসিয়া কহিল, “বিনয়, ইস্কুল থেকে আরম্ভ করে একসঙ্গেই তোমার সঙ্গে সমস্ত শিক্ষা লাভ করে এসেছি, কিন্তু এই বিদ্যালয়টাতে তোমার চেয়ে ফাঁকি দিয়ে এগিয়ে নিয়েছি।”

 বিনয় হাসিতেও পারিল না, কোনো কথাও বলিতে পারিল না। জেলখানার দুঃখরহস্যের ভিতর দিয়া তাহার বন্ধু তাহার কাছে বন্ধুর চেয়ে আরো যেন অনেক বড়ো হইয়া বাহির হইয়াছে। গভীর সম্ভ্রমে সে চুপ করিয়া রহিল। গোরা জিজ্ঞাসা করিল, “মা কেমন আছেন?'

 বিনয় কহিল, “মা ভালোই আছেন।”

 পরেশবাবু কহিলেন, “এসো বাবা, তোমার জন্যে গাড়ি অপেক্ষা করে আছে।”

 তিনজনে যখন গাড়িতে উঠিতে যাইবেন এমন সময় হাঁপাইতে হাঁপাইতে অবিনাশ আসিয়া উপস্থিত। তাহার পিছনে ছেলের দল।

 অবিনাশকে দেখিয়াই গোরা তাড়াতাড়ি গাড়িতে উঠিয়া পড়িবার উপক্রম করিল, কিন্তু তৎপূর্বেই সে আসিয়া পথরোধ করিয়া কহিল, “গৌরমোহনবাবু, একটু দাঁড়ান।”

 বলিতে বলিতেই ছেলেরা চীৎকার-শব্দে গান ধরিল—

দুখ-নিশীথিনী হল আজি ভোর।
কাটিল কাটিল অধীনতা-ডোর।

 গোরার মুখ লাল হইয়া উঠিল; সে তাহার বজ্রস্বরে গর্জন করিয়া কহিল, “চুপ করো।”

 ছেলেরা বিস্মিত হইয়া চুপ করিল। গোরা কহিল, “অবিনাশ, এ-সমস্ত ব্যাপার কী!"

৩৯৫