পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 অবিনাশ ও তাহার দলকে এক পাশে সরাইয়া দিয়া গোরা কহিল, “পরেশবাবু, গাড়িতে উঠুন।”

 পরেশবাবু গাড়িতে উঠিয়া হাঁপ ছাড়িয়া বাঁচিলেন। গোরা ও বিনয় তাঁহার অনুসরণ করিল।

 স্টীমারযোগে যাত্রা করিয়া পরদিন প্রাতঃকালে গোরা বাড়ি আসিয়া পৌঁছিল। দেখিল বাহির-বাড়িতে তাহার দলের বিস্তর লোক জটলা করিয়াছে। কোনোক্রমে তাহাদের হাত হইতে নিষ্কৃতি লইয়া গোরা অন্তঃপুরে আনন্দময়ীর কাছে গিয়া উপস্থিত হইল; তিনি আজ সকাল-সকাল স্নান সারিয়া প্রস্তুত হইয়া বসিয়া ছিলেন। গোরা আসিয়া তাঁহার পায়ে পড়িয়া প্রণাম করিতেই আনন্দময়ীর দুই চক্ষু দিয়া জল পড়িতে লাগিল। এতদিন যে অশ্রু তিনি অবরুদ্ধ রাখিয়াছিলেন আজ আর কোনোমতেই তাহা বাধা মানিল না।

 কৃষ্ণদয়াল গঙ্গাস্নান করিয়া ফিরিয়া আসিতেই গোরা তাঁহার সহিত দেখা করিল। দূর হইতেই তাঁহাকে প্রণাম করিল, তাঁহার পাদস্পর্শ করিল না। কৃষ্ণদয়াল সসংকোচে দূরে আসনে বসিলেন। গোরা কহিল, “বাবা, আমি একটা প্রায়শ্চিত্ত করতে চাই।”

 কৃষ্ণদয়াল কহিলেন, “তার তো কোনো প্রয়োজন দেখি নে।”

 গোরা কহিল, “জেলে আমি আর-কোনো কষ্ট গণ্যই করি নি, কেবল নিজেকে অত্যন্ত অশুচি বলে মনে হত, সেই গ্লানি এখনো আমার যায় নি—প্রায়শ্চিত্ত করতেই হবে।”

 কৃষ্ণদয়াল ব্যস্ত হইয়া কহিলেন, “না না, তোমার অত বাড়াবাড়ি করতে হবে না। আমি তো ওতে মত দিতে পারছি নে।”

 গোরা কহিল, “আচ্ছা, আমি নাহয় এ সম্বন্ধে পণ্ডিতদের মত নেব।”

 কৃষ্ণদয়াল কহিলেন, “কোনো পণ্ডিতের মত নিতে হবে না। আমি তোমাকে বিধান দিচ্ছি, তোমার প্রায়শ্চিত্তের প্রয়োজন নেই।”

 কৃষ্ণদয়ালের মতো অমন আচারশুচিবায়ুগ্রস্ত লোক গোরার পক্ষে কোনো-

৩৯৭