পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

 অবিনাশের ভক্তি আরও চড়িতে লাগিল। সে সহাস্যমুখে উপস্থিত ব্যক্তিবর্গের মুখের দিকে চাহিয়া গোরার বাক্যগুলির চমৎকারিতার প্রতি সকলের মন আকর্ষণ করিবার ভাব দেখাইল। কহিল, “আশীর্বাদ করুন, আপনার মতো ওইরকম নিষ্কামভাবে ভারতবর্ষের সনাতন গৌরব রক্ষার জন্যে আমরা জীবন সমর্পণ করতে পারি।”

 এই বলিয়া পায়ের ধুলা লইবার জন্য অবিনাশ হস্ত প্রসারণ করিতেই গোরা সরিয়া গেল।

 অবিনাশ কহিল, “গৌরমোহনবাবু, আপনি তো আমাদের কাছ থেকে কোনো সম্মান নেবেন না। কিন্তু, আমাদের আনন্দ দিতে বিমুখ হলেও চলবে না। আপনাকে নিয়ে একদিন আমরা সকলে মিলে আহার করব, এই আমরা পরামর্শ করেছি- এটিতে আপনাকে সম্মতি দিতেই হবে।”

 গোরা কহিল, “আমি প্রায়শ্চিত্ত না করে তোমাদের সকলের সঙ্গে খেতে বসতে পারব না।”

 প্রায়শ্চিত্ত! অবিনাশের দুই চক্ষু দীপ্ত হইয়া উঠিল। সে কহিল, “এ কথা আমাদের কারও মনেও উদয় হয় নি, কিন্তু হিন্দুধর্মের কোনো বিধান গৌরমোহনবাবুকে কিছুতে এড়াতে পারবে না।”

 সকলে কহিল, তা বেশ কথা। প্রায়শ্চিত্ত উপলক্ষেই সকলে একত্রে আহার করা যাইবে। সেদিন দেশের বড়ো বড়ো অধ্যাপক-পণ্ডিতদের নিমন্ত্রণ করিতে হইবে; হিন্দুধর্ম যে আজও কিরূপ সজীব আছে তাহা গৌরমোহনবাবুর এই প্রায়শ্চিত্তের নিমন্ত্রণে প্রচার হইবে।

 প্রায়শ্চিত্তসভা কবে কোথায় আহুত হইবে সে প্রশ্নও উঠিল। গোরা কহিল, এ বাড়িতে সুবিধা হইবে না। একজন ভক্ত তাহার গঙ্গার ধারের বাগানে এই ক্রিয়া সম্পন্ন করার প্রস্তাব করিল। ইহার খরচও দলের লোকে সকলে মিলিয়া বহন করিবে স্থির হইয়া গেল।

 বিদায়গ্রহণের সময় অবিনাশ উঠিয়া দাঁড়াইয়া বক্তৃতার ছাঁদে হাত নাড়িয়া সকলকে সম্বোধন করিয়া কহিল, “গৌরমোহনবাবু বিরক্ত হতে পারেন,

৪০৫