পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

জড়িত করা উচিত নহে, এই বলিয়া বিনয় তর্ক করিতে লাগিল।

 এমন সময় সতীশ একখানি চিঠি ও একটি ইংরাজি কাগজ লইয়া ঘরে প্রবেশ করিল। বিনয়কে দেখিয়া সে অত্যন্ত উত্তেজিত হইয়া উঠিল; শুক্রবারকে কোনো উপায়ে রবিবার করিয়া তুলিবার জন্য তাহার মন ব্যস্ত হইতে লাগিল। দেখিতে দেখিতে বিনয়ে এবং সতীশে মিলিয় সভা জমিয়া গেল। এ দিকে ললিতার চিঠি এবং তৎসহ প্রেরিত কাগজখানি সুচরিতা পড়িতে লাগিল।

 এই ব্রাহ্ম কাগজটিতে একটি খবর ছিল যে, কোনো বিখ্যাত ব্রাহ্মপরিবারে হিন্দুসমাজের সহিত বিবাহ-সম্বন্ধ ঘটিবার যে আশঙ্কা হইয়াছিল তাহা হিন্দুযুবকের অসম্মতি-বশত কাটিয়া গিয়াছে। এই উপলক্ষে উক্ত হিন্দুযুবকের নিষ্ঠার সহিত তুলনা করিয়া ব্রাহ্মপরিবারের শোচনীয় দুর্বলতা সম্বন্ধে আক্ষেপ প্রকাশ করা হইয়াছে।

 সুচরিতা মনে মনে কহিল, যেমন করিয়া হউক বিনয়ের সহিত ললিতার বিবাহ ঘটাইতেই হইবে। কিন্তু সে তো এই যুবকের সঙ্গে তর্ক করিয়া হইবে না। ললিতাকে সুচরিতা তাহার বাড়িতে আসিবার জন্য চিঠি লিখিয়া দিল; তাহাতে বলিল না যে, বিনয় এখানে আছে।

 কোনো পঞ্জিকাতেই কোনো গ্রহনক্ষত্রের সমাবেশে শুক্রবারে রবিবার পড়িবার ব্যবস্থা না থাকায় সতীশকে ইস্কুলে যাইতে প্রস্তুত হইবার জন্য উঠিতে হইল। সুচরিতাও স্নান করিতে যাইতে হইবে বলিয়া কিছু ক্ষণের জন্য অবকাশ প্রার্থনা করিয়া চলিয়া গেল।

 তর্কের উত্তেজনা যখন কাটিয়া গেল তখন সুচরিতার সেই একলা ঘরটিতে বসিয়া বিনয়ের ভিতরকার যুবাপুরুষটি জাগিয়া উঠিল। বেলা তখন নয়টা-সাড়ে-নয়টা। গলির ভিতরে জনকোলাহল নাই। সুচরিতার লিখিবার টেবিলের উপর একটি ছোটো ঘড়ি টিকটিক করিয়া চলিতেছে। ঘরের একটি প্রভাব বিনয়কে আবিষ্ট করিয়া ধরিতে লাগিল। চারি দিকের ছোটোখাটো গৃহসজ্জাগুলি বিনয়ের সঙ্গে যেন আলাপ জুড়িয়া দিল।

৪১৬