পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ধরিল। বিদ্যালয়ের পড়া শেষ করিয়া সতীশ তখন বাড়ি ফিরিতেছিল।

 সতীশ কহিল, “চলুন, বিনয়বাবু, আমার সঙ্গে বাড়ি চলুন।”

 বিনয় কহিল, “সে কি হয় সতীশবাবু।”

 সতীশ কহিল, “কেন হবে না?”

 বিনয় কহিল, “এত ঘন ঘন গেলে তোমার বাড়ির লোকে আমাকে সহ্য করতে পারবে কেন?”

 সতীশ বিনয়ের এই যুক্তিকে একেবারে প্রতিবাদের অযোগ্য জ্ঞান করিয়া কেবল কহিল, “না, চলুন।”

 তাহাদের পরিবারের সঙ্গে বিনয়ের যে সম্বন্ধ আছে সেই সম্বন্ধে যে কতবড়ো একটা বিপ্লব ঘটিয়াছে তাহা বালক কিছুই জানে না, সে কেবল বিনয়কে ভালোবাসে, এই কথা মনে করিয়া বিনয়ের হৃদয় অত্যন্ত বিচলিত হইল। পরেশবাবুর পরিবার তাহার কাছে যে-একটি স্বর্গলোক সৃষ্টি করিয়াছিল তাহার মধ্যে কেবল এই বালকটিতেই আনন্দের সম্পূর্ণতা অক্ষুন্ন আছে; এই প্রলয়ের দিনে তাহার চিত্তে কোনো সংশয়ের মেঘ ছায়া ফেলে নাই, কোনো সমাজের আঘাত ভাঙন ধরাইতে চেষ্টা করে নাই। সতীশের গলা ধরিয়া বিনয় কহিল, “চলো ভাই, তোমাকে তোমাদের বাড়ির দরজা পর্যন্ত পৌঁছে দিই।”

 সতীশের জীবনে শিশুকাল হইতে সুচরিতা ও ললিতার যে স্নেহ ও আদর সঞ্চিত হইয়া আছে সতীশকে বাহু দ্বারা বেষ্টন করিয়া বিনয় যেন সেই মাধুর্যের স্পর্শ লাভ করিল।

 সমস্ত পথ সতীশ যে বহুতর অপ্রাসঙ্গিক কথা অনর্গল বকিয়া গেল তাহা বিনয়ের কানে মধুবর্ষণ করিতে লাগিল। বালকের চিত্তের সরলতার সংস্রবে তাহার নিজের জীবনের জটিল সমস্যাকে কিছু ক্ষণের জন্য সে একেবারে ভুলিয়া থাকিতে পারিল।

 পরেশবাবুর বাড়ির সম্মুখ দিয়াই সুচরিতার বাড়ি যাইতে হয়। পরেশবাবুর একতলার বসিবার ঘর রাস্তা হইতেই দেখিতে পাওয়া যায়। সেই

৪২৪