পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ইচ্ছা যদি পরেশবাবু-”

 পরেশবাবু কহিলেন, “যে দীক্ষার কোনো ফল আমার পরিবার আশা করতে পারে সে দীক্ষা আমার দ্বারা হতে পারবে না। ব্রাহ্মসমাজে তোমাকে আবেদন করতে হবে।”

 বিনয়ের মন তৎক্ষণাৎ সংকুচিত হইয়া গেল। ব্রাহ্মসমাজে দস্তুরমত দীক্ষার জন্য আবেদন করার মতো মনের অবস্থা তো তাহার নহে- বিশেষত ললিতাকে লইয়া যে ব্রাহ্মসমাজে তাহার সম্বন্ধে এত আলোচনা হইয়া গেছে। কোন্‌ লজ্জায় কী ভাষায় সে চিঠি লিখিবে। সে চিঠি যখন ব্রাহ্ম-পত্রিকায় প্রকাশিত হইবে তখন সে কেমন করিয়া মাথা তুলিবে। সে চিঠি গোরা পড়িবে, আনন্দময়ী পড়িবেন। সে চিঠির সঙ্গে আর তো কোনো ইতিহাস থাকিবে না- তাহাতে কেবল এই কথাটুকুই প্রকাশ পাইবে যে, ব্রাহ্মধর্মে দীক্ষা গ্রহণ করিবার জন্য বিনয়ের চিত্ত অকস্মাৎ পিপাসু হইয়া উঠিয়াছে। কথাটা তো এতখানি সত্য নহে— তাহাকে আরও কিছুর সঙ্গে জড়িত করিয়া না দেখিলে তাহার তো লজ্জারক্ষার আবরণটুকু থাকে না।

 বিনয়কে চুপ করিয়া থাকিতে দেখিয়া বরদাসুন্দরী ভয় পাইলেন। তিনি কহিলেন, “উনি ব্রাহ্মসমাজের তো কাউকে চেনেন না, আমরাই সব বন্দোবস্ত করে দেব। আমি আজ এখনই পানুবাবুকে ডেকে পাঠাচ্ছি। আর তো সময় নেই, পরশু যে রবিবার।”

 এমন সময় দেখা গেল, সুধীর ঘরের সামনে দিয়া উপরের তলায় যাইতেছে। বরদাসুন্দরী তাহাকে ডাকিয়া কহিলেন, “সুধীর, বিনয় পরশু আমাদের সমাজে দীক্ষা নেবেন।”

 সুধীর অত্যন্ত খুশি হইয়া উঠিল। সুধীর মনে মনে বিনয়ের একজন বিশেষ ভক্ত ছিল; বিনয়কে ব্রাহ্মসমাজে পাওয়া যাইবে শুনিয়া তাহার ভারি উৎসাহ হইল। বিনয় যেরকম চমৎকার ইংরেজি লিখিতে পারে, তাহার যেরকম বিদ্যাবুদ্ধি, তাহাতে ব্রাহ্মসমাজে যোগ না দেওয়াই তাহার পক্ষে অত্যন্ত অসংগত বলিয়া সুধীরের বোধ হইত। বিনয়ের মতো লোক

৪৩০