পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

বিনয়ের সঙ্গে সঙ্গে সুধীর রাস্তায় বাহির হইয়া পড়িল। রীতিমত আহারে বসিয়া খাইবার পূর্বেই চাখিবার ইচ্ছা যেমন, সুধীরের সেইরূপ চঞ্চলতা উপস্থিত হইয়াছে। তাহার ইচ্ছা এখনই বিনয়কে বন্ধুসমাজে ধরিয়া লইয়া গিয়া সুসংবাদ দিয়া আনন্দ-উৎসব আরম্ভ করিয়া দেয়, কিন্তু সুধীরের এই আনন্দ-উচ্ছ্বাসের অভিঘাতে বিনয়ের মন আরও দমিয়া যাইতে লাগিল। সুধীর যখন প্রস্তাব করিল “বিনয়বাবু, আসুন-না আমরা দুজনে মিলেই পানুবাবুর কাছে যাই”, তখন সে কথায় কর্ণপাত না করিয়া জোর করিয়া তাহার হাত ছাড়াইয়া বিনয় চলিয়া গেল।

 কিছু দূরে যাইতেই দেখিল, অবিনাশ তাহার দলের দুই-একজন লোকের সঙ্গে হন হন করিয়া কোথায় চলিয়াছে। বিনয়কে দেখিয়াই অবিনাশ কহিল, “এই-যে বিনয়বাবু, বেশ হয়েছে। চলুন আমাদের সঙ্গে।”

 বিনয় জিজ্ঞাসা করিল, “কোথায় যাচ্ছ?”

 অবিনাশ কহিল, “কাশিপুরের বাগান ঠিক করতে যাচ্ছি। সেইখানে গৌরমোহনবাবুর প্রায়শ্চিত্তের সভা বসবে।”

 বিনয় কহিল, “না, আমার এখন যাবার জো নেই।”

 অবিনাশ কহিল, “সে কী কথা! আপনারা কি বুঝতে পারছেন এটা কত বড়ো একটা ব্যাপার হচ্ছে! নইলে গৌরমোহনবাবু কি এমন একটা অনাবশ্যক প্রস্তাব করতেন! এখনকার দিনে হিন্দুসমাজকে নিজের জোর প্রকাশ করতে হবে। এই গৌরমোহনবাবুর প্রায়শ্চিত্তে দেশের লোকের মনে কি একটা কম আন্দোলন হবে। আমরা দেশবিদেশ থেকে বড়ো বড়ো ব্রাহ্মণ পণ্ডিত সবাইকে নিমন্ত্রণ করে আনব। এতে সমস্ত হিন্দুসমাজের উপরে খুব একটা কাজ হবে। লোকে বুঝতে পারবে, এখনো আমরা বেঁচে আছি। বুঝতে পারবে, হিন্দুসমাজ মরবার নয়।”

 অবিনাশের আকর্ষণ এড়াইয়া বিনয় চলিয়া গেল।

৪৩২