পাতা:গোরা-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

কখনো কল্পনাও করিতে পারিত না। হারানবাবুর সম্বন্ধে পুনরায় বরদাসুন্দরীর মত পরিবর্তন করিবার সময় আসিল।


 যতক্ষণ দীক্ষাগ্রহণের ব্যাপারটা বিনয় ঝাপসা করিয়া দেখিতেছিল ততক্ষণ খুব জোরের সঙ্গেই সে আপনার সংকল্প প্রকাশ করিতেছিল। কিন্তু যখন দেখিল এজন্য ব্রাহ্মসমাজে তাহাকে আবেদন করিতে হইবে এবং হারানবাবুর সঙ্গে এ লইয়া পরামর্শ চলিবে, তখন এই অনাবৃত প্রকাশ্যতার বিভীষিকা তাহাকে একান্ত কুণ্ঠিত করিয়া তুলিল। কোথায় গিয়া কাহার সঙ্গে সে যে পরামর্শ করিবে কিছুই ভাবিয়া পাইল না, এমনকি আনন্দময়ীর কাছে যাওয়াও তাহার পক্ষে অসম্ভব হইল। রাস্তায় ঘুরিয়া বেড়াইবার মতো শক্তিও তাহার ছিল না। তাই সে আপনার জনহীন বাসার মধ্যে গিয়া উপরের ঘরে তক্তপোশের উপর শুইয়া পড়িল।

 সন্ধ্যা হইয়া আসিয়াছে। অন্ধকার ঘরে চাকর বাতি আনিতেই তাহাকে বারণ করিবে মনে করিতেছে এমন সময়ে বিনয় নীচে হইতে আহ্বান শুনিল, “বিনয়বাবু! বিনয়বাবু!”

 বিনয় যেন বাঁচিয়া গেল। সে যেন মরুভূমিতে তৃষ্ণার জল পাইল। এই মুহূর্তে একমাত্র সতীশ ছাড়া আর-কেহই তাহাকে আরাম দিতে পারিত না। বিনয়ের নির্জীবতা ছুটিয়া গেল। “কী ভাই সতীশ” বলিয়া সে বিছানা হইতে লাফাইয়া উঠিয়া জুতা পায়ে না দিয়াই দ্রুতপদে সিঁড়ি দিয়া নীচে নামিয়া গেল।

 দেখিল, তাহার ছোটো উঠানটিতে সিঁড়ির সামনেই সতীশের সঙ্গে বরদাসুন্দরী দাঁড়াইয়া আছেন; আবার সেই সমস্যা, সেই লড়াই। শশব্যস্ত হইয়া বিনয় সতীশ ও বরদাসুন্দরীকে উপরের ঘরে লইয়া গেল।

 বরদাসুন্দরী সতীশকে কহিলেন, “সতীশ, যা তুই ওই বারান্দায় গিয়ে একটু বোস্‌ গে যা।”

 সতীশের এই নিরানন্দ নির্বাসনদণ্ডে ব্যথিত হইয়া বিনয় তাহাকে কতকগুলা ছবির বই বাহির করিয়া দিয়া পাশের ঘরে আলো জ্বালিয়া

৪৩৫